আপনারা জানেন আসলে কোন ঈশ্বর নেই - ২

আপনারা জানেন আসলে কোন ঈশ্বর নেই
There is No God (And You Know It)

মূল: স্যাম হ্যারিস (Sam Harris)

অনুবাদ: অগ্নি অধিরূঢ়

পূর্ব প্রকাশের পর

রাক্ষুসে হারিকেন ক্যাটরিনা যখন নিউ অরলিন্সকে গিলে খাচ্ছিল, তখন ইরাকের এক ব্রিজে হাজারের মত Shiite তীর্থ যাত্রী পদদলিত হয়ে মারা যাচ্ছিল। এই তীর্থযাত্রীরা যে কোরানের ঈশ্বরের সর্বশক্তিমানতায় বিশ্বাস করতো সেবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বস্তুত: তাদের জীবন তাঁর (ঈশ্বরের) অস্তিত্বের অবিসংবাদিত ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে বিন্যাস্ত হয়েছে। তাদের নারীরা পুরুষের সামনে নিজেদেরকে ঢেকে রাখে। তাদের পুরুষরা তাঁর (ঈশ্বরের) বাক্যাবলীর প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে নিয়মিতভাবে একে অপরকে হত্যা করে। এই বিষাদান্তক ঘটনাপ্রবাহ থেকে বেঁচে যাওয়া কেউ যদি নিজেদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে তাহলে তা অবশ্যই বিশেষ ঘটনা বলে চিহ্নিত হবে। খুব সম্ভবত: যারা বেচে যায় তারা একে ঈশ্বরের অপার করুণা বলেই মনে করে।

রক্ষা পাওয়াদের এই আত্মপ্রবঞ্চনা ও সীমাহীন আত্মপ্রেমকে একমাত্র নাস্তিকরাই শনাক্ত করতে পারে। শুধুমাত্র নাস্তিকরাই বুঝতে পারে যে বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাওয়ারা ঈশ্বরের অশেষ অনুগ্রহ লাভ করেছে এটা বিশ্বাস করা নীতিগতভাবে কতটাই না আপত্তিজনক। অথচ সমসাময়িক সময়ে সেই ঈশ্বর তাদের শিশুদেরকে দোলনাতেই মেরে ফেলেছে। পরকালের কল্পনার আতিশয্যে অতিষ্ট এই পৃথিবীর বাস্তবতার ভান করাকে সে (নাস্তিক) প্রত্যাখ্যান করেছে। জীবন যে কত মূল্যবান তা একজন নাস্তিক হাড়ে হাড়ে অনুভব করেন এবং বস্তুত যথাযথ কোন কারণ ছাড়াই লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের সুখভোগকে সংক্ষিপ্ত করে ফেলছে এটা যে কত দুর্ভাগ্যজনক- এই বিষয়টাও একজন নাস্তিক ভাল বোঝেন।

বিশ্বাসী মানুষরা নিয়মিত পরস্পরকে এই বলে সান্তনা দেয় যে, মানুষের ভোগান্তির জন্য ঈশ্বর দায়ী নন। তাহলে আমরা কিভাবে বুঝব যে ঈশ্বর সর্বজ্ঞ এবং সর্বশক্তিমান? আর কোন পথ নেই। এটা থিওডিসির (Theodicy) পুরনো সমস্যা। আর হ্যাঁ, আমাদের একে সমাধানযোগ্য বলে মনে করা উচিত। যদি সত্যি ঈশ্বর থেকে থাকে, তাহলে তিনি হয় কোন কুখ্যাত প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে থামানোর ব্যাপারে কিছু করতে পারেন না, অথবা এতে তার কোন কিছু যায় আসে না। এতে মনে হয় ঈশ্বর হয় নপুংশক অথবা হিংস্র। ধার্মিক পাঠকদেরকে পরবর্তী লাইনটি পড়তে মানা করছি। "মানবীয় নীতিনৈতিকতার মানদণ্ড দিয়ে ঈশ্বরকে বিচার করা সম্ভব নয়"। কিন্তু হ্যাঁ, অবশ্যই, ঈশ্বরের ভালত্বকে প্রথম স্থানে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানবীয় নৈতিকতার মানদণ্ডকে ঠিকঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। অথচ এগুলোকে যতটা অচিন্তনীয় ভাবা হয়, ততটা দুর্বোধ্য নয়। যদি আব্রাহামের (ইব্রাহিম) ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকত, তাহলে তিনি শুধুমাত্র এই বিশাল সৃষ্টিজগতের নয়, মানুষ হবারও অযোগ্য হতেন।

আর একটি সম্ভাব্যতা অবশ্যই রয়েছে। ধর্মীয় ঈশ্বর আসলে কাল্পনিক- এটাই সবচাইতে যথাযথ এবং সবচেয়ে কম নিন্দনীয়। রিচার্ড ডকিন্স যেমন বিশ্লেষণ করেছেন- আমরা, সব নাস্তিকেরা জিউস, থর সকলকে শ্রদ্ধা করি। শুধুমাত্র নাস্তিকরাই বোঝে যে, ধর্মীয় ঈশ্বরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর অশেষ বিড়ম্বনাকে গ্রহণ করে নাস্তিকরাই শুধু প্রবলভাবে আবেগতাড়িত হন। এটা ভয়ংকর যে আমরা সবাই মারা যাব, এবং আমাদের প্রিয় সবকিছু হারিয়ে যাবে। এর দ্বিগুণ ভয়ংকর ঘটনা হল অনেক মানুষ জীবিতাবস্থাতেই অপ্রয়োজনীয় কষ্ট ভোগ করছে। এই অশেষ যন্ত্রণার প্রধান কারণ হল সরাসরি ধর্ম।

ধর্মীয় বিদ্বেষ, ধর্মযুদ্ধ, ধর্মীয় ভ্রান্তি, পবিত্র মতবাদের ধর্মীয় বিভিন্নতা ইত্যাদি নাস্তিকতাকে নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক আবশ্যকতায় রূপান্তরিত করেছে। এটা অতীব জরুরি প্রয়োজনীয়তা, যদিও এর কারণটি নাস্তিকদের সমাজের প্রান্তসীমায় স্থান দিয়েছে। শুধুমাত্র বাস্তবতার নৈকট্যে বাস করার কারণে নাস্তিকরা পড়শীর অলীক জীবনের সান্নিধ্য থেকে লজ্জা পেয়ে বিমুক্ত হয়েছে।

সমাপ্ত

এই প্রবন্ধটি স্যাম হ্যারিসের "একজন নাস্তিকের ইসতেহার"(An Atheist Manifesto) রচনা থেকে সংকলিত হয়েছে। ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে "একজন নাস্তিকের ইসতেহার" রচনাটি প্রকাশিত হয় ট্রুথডিগ (truthdig.com) পত্রিকায়।

মূল প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে The Huffingtonpost এর ২০০৫ সালের ৬ অক্টোবর সংখ্যায়

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post