১৩। কোন কিছুকে অপরাধবোধের সাথে বিশ্বাস করলে প্রশ্ন করাকে কঠিন করে তোলা হয়। এই ধরণের আত্মসমর্পণ আমার সামর্থ্যের অতীত। আমি এমনটা কোনক্রমেই করতে পারি না। আমার একটি অনুসন্ধিৎসু মন আছে। আমি আমার বিশ্বাসগুলোর ত্রুটি বুঝতে পেরেছি। আর এটা ভবিষ্যৎকালেও বহাল থাকবে। প্রশ্নাতীত কোন চরম শক্তিকে বিশ্বাস করা, সকলের প্রিয় দেবদূত বা ফেরেশতাকে বিশ্বাস করা আমার পক্ষে অসম্ভব। প্রশ্ন করাকে বাধা দেয় এই বিশেষ কারণটিই তাদেরকে অবিশ্বাস করার পক্ষে যথেষ্ট জোড়ালো কারণ।
১৪। নিকট অতীতে প্রায়ই মানুষকে মন্দ আত্মা বা মন্দ স্বভাব থেকে মুক্তির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা হত। রাজারা ঐশ্বরিক অধিকার পেয়ে দেশ শাসন করছেন বলে অঙ্গীকার করতেন। আবার কখনও তারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের বংশধর বলে দাবী করতেন, কখনও বা নিজেকেই ঈশ্বর বলে ঘোষণা করতেন। নির্যাতন, গণহত্যা, জাতিবিদ্বেষ, দাসত্ব, বহুগামীতা, আক্রমণ, গণধর্ষণ এবং যুদ্ধগুলোকে ধর্মীয় সৃষ্টিকর্তার সমর্থণের কারণে নীতিসম্মত বলে মেনে নেয়া হত। এইসব কারণে ধর্মকে একটি ভয়ংকর যুদ্ধাস্ত্র বলে আমার কাছে সবসময় মনে হয়েছে। একজন মানুষ হিসেবে এইসব অপরাধের আমিও একজন ভাগীদার। ওই কুৎসিত, নোংরা, বীভৎস আচরণগুলোর কোন সহযোগী আমি আর হতে চাই না।
১৫। ধর্মগুলো মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ইস্যূতে প্রায় ভুল করে। কখনো কখনো পিছু হটে যায়। যদি চার্চের নিয়ন্ত্রক্ষমতা সত্যিই পরমশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত, তাহলে এ ধরণের ভুল তারা করত না। পরম শক্তির ভাবমূর্তি রক্ষা করবার জন্য এ ধরণের আচরণ তারা করে। বস্তুত যে শাসনব্যবস্থা নিজেদের ভুলগুলোকে স্পষ্টভাবে হাস্যকর করে না তোলা পর্যন্ত সংশোধন করে না, সেই শাসনব্যবস্তার ভাবমূর্তি রক্ষার চেষ্টা তারা করে। যেমন গ্যালিলিও, বিবর্তনবাদ ইত্যাদি।
১৬। খ্রিস্টিয় ধর্মের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা বা অপকর্মগুলি যখন আমি চিহ্নিত করি, তখন খ্রিস্টানরা সাধারণত বলে যে, ওহ আচ্ছা, ওরা সাচ্চা খ্রিস্টান না, আমি এবং আমার চার্চ অন্যরকম। এই ধরণের ঘটনা এতই সাধারণ যে, প্রত্যেকে নিজেকে সাচ্চা খ্রিস্টান বলছে, পক্ষান্তরে অন্য হাজারজন সেই তাকেই আবার ভিন্নপথের যাত্রী বলে মনে করছে।
১৭। চার্চের শিক্ষা যৌন উত্তেজক, বিচারপ্রবণ, আক্রমণাত্মক, সামঞ্জস্যহীন। শুধু তাই নয়; এই শিক্ষা সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপনের দর্শন শেখানোর জন্য যথেষ্ঠ উপযোগী নয়।
১৮। এক শিশুতোষ ও ভয়ঙ্কর ঈশ্বরের শত শত দ্ব্যর্থবোধক, পরস্পরবিরোধী, আরোপিত ও রক্তলোলুপ বাক্য দিয়ে বাইবেল ভর্তি। যারা এই তথ্যকে স্বীকার করে না, তারা হয় ভালভাবে বাইবেল পড়েনি, অথবা কোন জটিল মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
বাইবেল যে আসলে সংকীর্ণ চিন্তাধারার আকর- এ বিষয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। এছাড়াও এই বইয়ের অকেন সংস্করণ আছে। এটা সবসময় আপডেট (পড়ুন নতুনভাবে লেখা) করা হচ্ছে। ধর্মীয় নেতারা নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে সবসময় এই কাজ করে যাচ্ছেন। 'বাইবেলের মত কোন কিছু নয়'_ এ ধরণের কথা বলাটা "অ্যাপল কম্পিউটার আইবিএমর এর চেয়ে ভাল" - এভাবে বলার মত। কারণ কোন অ্যাপল বা কোন আইবিএম এরকম করে প্রশ্ন তোলা যায় যে 'কোন বাইবেল'। নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানীদের দ্বারা যখন পুরনো কোন গোঁড়ামী প্রশ্নবিদ্ধ হয় তখন ধর্মনেতারা বাইবেলে নানারকম পরিবর্তন আনেন। আর মজার ব্যাপার হল এই পরিবর্তনগুলো বেশিরভাগ সময় কোন পুরনো গোঁড়া মতবাদকে ঢাকার জন্য আরেকটি গোঁড়া মতবাদের জন্ম দেয়।
১৯। মানুষের জন্য আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি খুব বিপদজনক। কিছু কিছু অবিশ্বাসী মানুষ আছেন যারা মনে করে কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছে। এ ধরণের দায়িত্ববোধ আসলে মূল্যহীন। নিজেদের প্রজাতিকে বাঁচানোর জন্য ব্যক্তিগত আমি মনে করি এটা বেশ ভাল সম্ভাব্য ধারণা। আমাদের বোঝা উচিত মহাকাশের অন্যান্য ধুলিকণার মত আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পূর্ণ উদাসীন। এমনকি আমরা যদি বংশবিস্তার করে এই বিশ্বকে ভরিয়ে ফেলি কিংবা আণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে ফেলি তাতেও কোন যায় আসে না। আমরা নিজেরাই নিজেদের অস্তিত্বের জন্য দায়বদ্ধ। এ বিষয়ে আমাদের নিজেদের পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে। অতএব আমাদের কোন সর্বশক্তিমান পিতার কোন দরকার নেই। যদি প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের থাতে থাকে আর সেগুলো থেকে সঠিক শিক্ষা যদি আমরা নিতে পারি, তাহলে আমরাই ঠিকঠাক রাখতে পারব। এর সাফল্য আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করবে। ধর্ম মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক হতে উৎসাহিত করে। এটা মানবগোষ্ঠীর জন্য বরং অনেকাংশে আত্মঘাতী। এজন্য আমি খ্রিস্টিয় বা অন্য যে কোন আত্মকেন্দ্রিক ধর্মের সক্রিয় বিরোধীতা করি।
২০। ইতিহাসে ধর্মের বেশ কিছু বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক প্রভাবক হিসেবে ধর্ম একাধিক সূত্রে মানুষকে সমাজবদ্ধ করেছিল। বিভিন্ন জটিল মহাকালিক বাঁকে মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু এখন আমরা অর্থাৎ এই গোটা মানবজাতি শৈশবকাল অতিক্রম করেছি, কৈশোরে পৌঁছেছি। এখন আর শিশুতোষ রূপকথার জগতে বাস করা আমাদের শোভা পায় না। আমাদের খুব দ্রুত বয়প্রাপ্ত হওয়া উচিত। আরও নানারকম বালখিল্যচিত ঘটনার মুখোমুখি (যেমন: আত্মঘাতী প্রবণতা) আমাদের হতে হবে। আমি শৈশবকে ধরে রাখা নয়, ক্রমান্বয়ে বড় হবার পক্ষে।
২১। পরকাল বা একটি আত্মার প্রত্যাশা মানুষ কেন করে তা আমাকে কেউ কখনও ব্যাখ্যা করে বলেনি। আমরা কখন একটি আত্মার অধিকারী হয়েছি? জন্মের সময়, নাকি যখন মায়ের ডিম্বাণুকে পিতার শুক্র যখন নিষিক্ত করে ঠিক তখনই? ব্যাপ্টিজমের সময় নাকি কখনই না? ডলফিনদের আত্মা নেই কেন? অনেক প্রশ্নের ব্যাপারে খ্রিস্টান ধর্ম নিরুত্তর থেকে গেছে। রেফ্রিজারেটর, টোস্টার বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করা উচিত কি অনুচিত? এই সব বিষয়ে তথকথিত 'ঈশ্বরের শব্দাবলী'তে কিছু লেখা নেই। যদি ঈশ্বর 'পবিত্র শব্দ'গুলো লিখে থাকে, তাহলে কেন সেখানে অস্পষ্টতা আছে? কেন তিনি কিছু কথা বলতে প্রতীকের আশ্রয় নিয়েছেন আর কিছু কথা বলেছেন সোজাসুজি। কেন তিনি রূপক অংশকে সহজবোধ্য ভাষায় বর্ণনা করেন নি। যদি বাইবেল জীবনের ম্যানুয়াল হিসেবে গণ্য হয়, তাহলে বলতে হবে এটা খুব দুর্বল লেখকের লেখা, জীবন ও জগতের বিভিন্ন বিশেষ পয়েন্ট সম্পর্কে এখানে যা আছে তা বিভ্রান্তিকর এবং অস্পষ্ট। আমি নিশ্চিত একজন ঈশ্বরের এর চাইতে আরও ভাল কাজ করতে পারা উচিত ছিল। ধর্মগ্রন্থের বিভ্রান্তিগুলো আমাদের মনে এমন ধারণা তৈরি করে যে এগুলো ঈশ্বরের তৈরি নয়, বরং কিছু মানুষের দলবাজি করার কিছু বিধিবিধান মাত্র।
২২। শুরু থেকে ধর্মগুলো বিভিন্ন বিষয়ে ভবিষ্যত বাণী করত। এর বেশিরভাগ মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে। তথ্যসূত্র অনুযায়ী ধর্মীয় নেতারা অনবরত শুভ-অশুভের যুদ্ধ ও ভবিষ্যতের জাগতিক ঘটনা নিয়ে বক্তব্য দিযে থাকে (যেমন: ডাইনী স্ত্রীদের পুনর্জীবনপ্রাপ্তি, কিছুদিন আগে অস্ট্রিয়াতে এটা নিয়ে বেশ শোরগোল হল)। কিছু ইভানজেলিক ঘরাণার নেতারা তাদের দলভুক্তদের বলেছিল-"ঈশ্বর আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমাদের সংখ্যা বাড়িতে ০৩ (তিন) মিলিয়ন করতে বলেছে।" এসব এক ধরণের ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু না।
২৩। উপরের যুক্তিগুলোর কোনটার পাল্টাযুক্তি আপনারা হয়ত দিতে পারেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে যুক্তিগুলো বিশ্বাস ও অবিশ্বাস এই দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি বিষয়ে আমার সিদ্ধান্তের পক্ষে এক জোরালো শক্তি দেয়।
সমাপ্ত
লেখা ভাল লাগল। এই ধরণের লেখা আরও পড়তে চাই।
ReplyDeleteআপনাদের মত মানুষদেরকে প্রকাশ্যে ফাসীতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত। এই জন্য বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।
ReplyDeleteমুজিবর ভাই, অন্যের মতকে এত অশ্রদ্ধা কেন? লজ্জা করে না - একদিন আমাদের নবীও তো অন্যের মতের বিরুদ্ধেই নতুন ধর্মমত প্রচার করেছিলেন! হায়রে বাঙ্গালী মুসলমান!
ReplyDeleteআমার মনে কয়, এই ব্লগটা কোন মালাউনের তৈরি।
ReplyDeleteহুম...
ReplyDeleteআমি নিশ্চিত একজন ঈশ্বরের এর চাইতে আরও ভাল কাজ করতে পারা উচিত ছিল। ধর্মগ্রন্থের বিভ্রান্তিগুলো আমাদের মনে এমন ধারণা তৈরি করে যে এগুলো ঈশ্বরের তৈরি নয়, বরং কিছু মানুষের দলবাজি করার কিছু বিধিবিধান মাত্র।
ReplyDeleteচমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
কিছু অসহিষ্ণু মন্তব্যকারীর ভাষাভঙ্গি দেখলাম। আর তাতেই বুঝতে পারি তথাকথিত ধর্ম নামের হাওয়াই বস্তুটা আসলে ভালো মানুষের চেয়ে এরকম যুক্তিহীন পাণ্ডাই পয়দা করছে বেশি। এরা না পারলো ধার্মিক হতে, না পারলো যুক্তিশীল নাস্তিক্যবাদী হতে। এরকম বকচ্ছপের জন্য করুণাই হয়। এদেরই বা দোষ কী ? ধর্ম তো কাউকে যুক্তিশীল হবার শিক্ষা দেয় না। ফলে মধ্যযুগীয় বর্বরতাটায় এদেরকে মানিয়ে যাচ্ছে বেশ।
আপনি লিখুন। আরো বেশি করে লিখে যান।
শুভ কামনা রইলো।
আপডেট: রণদীপম বসু'র প্রতি অসংগত মনোভঙ্গি প্রকাশ করার জন্য উপরের মন্তব্যটি মুছে দেয়া হল।
ReplyDeletePost a Comment