প্রথমত বলতে চাই, সব কারণগুলোই যে সম্পূর্ণরূপে যৌক্তিক তা হয়তো নয়। কিছু কিছু কারণ আছে যেগুলো বিষয়গতভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে। এই আলোচনায় নাস্তিক বলতে যিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না, এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
১। আমি এখন পর্যন্ত ঈশ্বর বা দেবতাদের সাথে মানুষের দেখা হবার কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাইনি। ঈশ্বরের সাথে মানুষের সাক্ষাতের যেসব ঘটনার কথা শোনা যায়, তার সবগুলোই ধোঁয়াশায় ঢাকা। আর এ ধরণের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘুমের মধ্যে অথবা অসংলগ্ন মানসিক অবস্থার মধ্যে ঘটেছে। মানুষ যখন নিজে নিজে প্রভাবিত হতে চেয়েছে কিংবা মাদকাচ্ছন্ন ছিল তখন এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে। এই ধরণের ঘটনা পরিশেষে গুজবে পরিণত হয়েছে। বস্তুত: এ ধরণের ঘটনাগুলো সব অতিলৌকিক, অপরিমাপযোগ্য এবং অবিশ্বাস্য ধরণের। চোখ বন্ধ করে এই ঘরণের ঘটনাকে গ্রহণ করার চাইতে বরং অবিশ্বাস করা সহজ।
২। পৃথিবীতে সহস্র রকমের ধর্মীয় বিশ্বাসের কাঠামো রয়েছে। এগুলো কখনও বেশি বা কখনও স্বল্প উপায়ে অন্যদের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করে। সাধারণত: আত্মসমালোচনাহীন মানসিকতার কাছে সবগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। এদের মধ্যে কোন কোনটা আবার দেবতাবিহীন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হল কোনটা সঠিক? যদি কোন একটি হয়, তাহলে কেন? কেনই বা একটি ধর্ম প্রধানতম হবে? কোন একটির যথার্থতা কি সবগুলোর অসারতার কথা বলে না?
৩। ইতিহাসের অগ্রগতির সাথে সাথে প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যাক্ষেত্রে ঈশ্বরের প্রভাব কমে যাচ্ছে। যদি ঈশ্বর না থাকেন তাহলে একটি বিষয় খুব পরিষ্কার হয়ে যায়। আমরা যেসব বিষয় বুঝিনা শুধুমাত্র সেসব বিষয়ে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। অন্যভাবে বললে, সম্ভাব্য অতিলৌকিক ঘটনা হিসেবে প্রচলিত ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে। যাহোক, ৫০০ বছর আগে বেহেশতের সত্যতা নিশ্চিত করতে ঈশ্বরের দরকার ছিল। আর এখন আমরা জানি প্রকৃতির চারটি শক্তি ও বস্তুর তিন অবস্থা দ্বারা সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আরও নতুন কোন আবিষ্কার এসে ধারণাগত ঈশ্বরকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না করে ততক্ষণ পর্যন্ত এই নতুন ধারণা প্রচলিত না থাকার কোন কারণ আমি দেখি না।
৪। যদি কোন ঈশ্বর থেকে থাকেন, তাহলে তার অস্তিত্বের স্বরূপ কি? বা ঈশ্বরের সৃষ্টির ঘটনাটা কিরকম? এ প্রসঙ্গে বিগ ব্যাং থিওরীর সহজবোধ্যতার কথা উল্লেখ করা যায়। কিন্তু ঈশ্বরের সৃষ্টির স্বপক্ষে এ ধরণের কোন আইডিয়া এখন পর্যন্ত আমার কানে আসেনি।
৫। যে সব মানুষ এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তৃত জ্ঞান রাখেন তারা জানেন এই মহাজগতকে সচল রাখার জন্য কোন কল্পিত ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই। (যেমন: আলবার্ট আইনস্টান, আইজাক আসিমভ, ডেভিড সুজুকি, আর্থার সি ক্লার্ক প্রমুখ। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা দুর্বলতার পরিচায়ক। কিন্তু ধর্মপ্রচারকরা যেভাবে বিশ্বাস করার জন্য চাপ দেন তার চাইতে কর্তৃপক্ষ যখন নিজেকে খুঁজে পাবার জন্য আমাকে উপদেশ দেন সেটা আরও বেশি দুর্বল মনের পরিচয় প্রকাশ করে। আমি বিজ্ঞান এবং দর্শন সম্পর্কে অনেক বেশি জানেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করার জন্য পরকালের প্রয়োজনীয়তায় যে বিশ্বাস তা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক অসুস্থতামাত্র।
৬। আপাতদৃষ্টিতে বেশিরভাগ ধর্মগুলো নিখুঁত সাহিত্যকীর্তি বা নিছক কল্পনা প্রবণতাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। পৃথিবীর বয়স, মানুষের আদি উৎসের সময়কাল, সহস্য বৎসরের ইতিহাসে ইত্যাদি বিষয়ে ধর্ম থেকে ধর্মে অনেক পার্থক্য আছে। প্রত্নতাত্ত্বিক, ভূবিজ্ঞানী, প্রাণিবিজ্ঞানী এদেরও অন্বেষণের সাথে ধর্মের বক্তব্যের বিরাট পার্থক্য রয়েছে।
৭। Monty Python বইটির অর্ধেকও আমি উপভোগ করতে পারিনি। হয়তো আমি নাস্তিক বলেই এমন ঘটেছে। কিন্তু MMPI এর পরীক্ষায় নিউইয়র্কের ক্যাথলিকদের মধ্যে অনেক ধর্মনেতাকেক Paranoid Schizophrenic পাওয়া গেছে (সম্ভবত ৬০% এর বেশি)। শুধু তাই নয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্বগণের মধ্যে মৃগীরোগ্রস্ত রোগীর সংখ্যা কম নয়। অন্যভাবে বললে বলা যায় ধর্মীয় কার্যাবলীতে যারা নিয়োজিত তারা অনেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ।
৮। সান্তা ক্লজ, ইস্টার বালি, ঈশ্বর, দানব এবং কিংবা গোলাপী শিংওয়ালা ঘোড়া (Unicorn), এদের মধ্যে আমি কোন পার্থক্য কখনও দেখিনি। যখন আপনি ছোট ছিলেন তখন আপনার পিতামাতা এই গল্পগুলো আপনার কাছে করেছিল। এমন কি এখনকার বাবা মায়েরাও এসব গল্প শিশুদের কাছে বলে থাকে। এখন আমি কেন খ্রিস্টান নই এ বিষয়ে নিদিষ্ট করে কিছু বলব।
৯। অসংখ্য বিশ্বাসীর সাথে আমি ধর্ম বিষয়ে আলোচনা করেছি (এর মধ্যে তিনজন আমার প্রভাবে নাস্তিক হয়ে গেছে)। এদের মধ্যে বেশির ভাগ সাধারণ অসঙ্গতিগুলোর কোন গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারেনি। এটা ঠিক যে এদের অনেকে ধর্মের জন্য জীবনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। তারপর যখন আদর্শের কানাগলিতে আটকে গেছে তখন মানসিক বিভ্রান্তিতে ভুগেছে। এই ধরণের সমস্যায় পড়ে তারা বিভিন্ন অসঙ্গতিগুলো সম্পর্কে চিন্তা করা বাদ দিয়ে দেয়। মানসিক বিভ্রান্তির খাত না ভোগ করার চাইতে সবকিছুকে সোজাসুজি বিশ্বাস করা বরং তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। কিন্তু এমনটা আরও বেশি বিভ্রান্তি তৈরি করে। তাই আমি মেনে করি খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসীদেরকে বিভিন্ন মতবাদে বন্দীত্ব দশা থেকে উদ্ধার করার জন্য ধর্মান্ধতাকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।
১০। মনস্তত্ত্ব পড়ার কারণে আমি বুদ্ধিবৃত্তির সাথে স্নায়ুতন্ত্রের সম্পর্কের বিভিন্ন গতিপ্রকৃতি আমি চিনি। কয়েকরকমের অপারেশন আছে যার মাধ্যমে কারও নিজস্ব ব্যক্তিত্ব বদলে ফেলা সম্ভব। ব্যক্তির নিজস্ব সচেতনতা, স্মৃতি, প্রতিক্রিয়া, চিন্তা সামর্থ্য, চিন্তা পদ্ধতি ইত্যাদি যেগুলোর সাথে মন বা আত্মার সচলতাকে মেলানো হয়, এর সবগুলো বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসা দ্বারা প্রভাবিত করা সম্ভব। মগজের বস্তুগত কাজকে কেন আত্মার সাফল্য বলে মনে করব? তার চাইতে এমনটা বিশ্বাস করা সহজ (এবং সঠিক) নয় কি যে এই ব্যক্তিত্বের সক্রিয়তা আসলে সরাসরি মগজের প্রভাব, কোন অলৌকিক আত্মার নয়।
১১। ইতিহাস বলে যে, যে সব দৃষ্টিকোন বা মতবায় ভয়ংকর রকমের আক্রমণাত্মক সেগুলো শত শত বৎসর ধরে টিকে আছে। এই ধরণের হিংস্র আক্রমণাত্মক ধর্মের উদাহরণ হল খ্রিস্টান, ইহুদী এবং ইসলাম। আগ্রাসী আচরণের কারণে এখনও এগুলো প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। এর অর্থ কি এমন যে অন্তত এই আগ্রাসী ও সাম্রাজ্যবাদী মতবাদগুলোই সঠিক পথ?
১২। মুসলমানরাসহ বিভিন্ন ধর্মের অসংখ্য মানুষ দৃঢ়তার সাথে বলেছে যে কোন একটি পরম শক্তি বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব সত্যিই তারা অনুভব করেছেন। যখন তারা কোন বিশেষ ধর্মীয় আচরণে গভীরভাবে ডুবে যান, তখন এক অনন্য পরমানন্দ তারা অনুভব করেন। এমন অনুভূতি ঈশ্বরের উপস্থিতি ছাড়া সম্ভব নয়। প্রসঙ্গক্রমে জানাচ্ছি যে, তারা যেমন বলেছে আমিও ঠিক একইরকম এক ভিন্ন অনুভূতির অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। আমি একরাতে যখন পাহাড়ের চুড়ায় মেঘমুক্ত আকাশের নিচে শুয়েছিলাম, তখন আমার মনে হল এই পৃথিবীটা যেন এক বিরাট মহাকাশযান। আমাদেরকে নিয়ে এই পৃথিবী ছায়াপথ থেকে ছায়াপথে তুমুলবেগে ছুটে চলেছে। পরিপাশ্বের বিশালতা ও সৌন্দর্যে আমি এত বেশি অভিভূত হয়েছিলাম যে, কয়েক ঘন্টার জন্য আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম। তা যা হোক, আমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিরহস্যের মূল সূত্রগুলো জানি। এর সৃষ্টির জন্য কোন ঈশ্বরের প্রয়োজন পরেনি। আর যদি কোন সৃষ্টিকর্তা থেকেও থাকে, তাহলে বলতে হবে যে তিনি সমকালে কিছুই করছেন না।
অসম্পূর্ণ
আমি অপেক্ষায় থাকলাম আপনি আমাকে নাস্তিক করুন। কারণ আপনি উল্লেখ করেছেন আমার সান্নিধ্যে থেকে তিন জন নাস্তিক হয়েছে। আপনি আমার ব্লগে এসে কমেন্ট করতে পারেন, লিঙক নিচে দিলমি।
ReplyDeletehttp://www.somewhereinblog.net/blog/swadhinatatumibestblog
ধন্যবাদ
মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ।
ReplyDelete'নাস্তিক করুন' কথাটি বুঝলাম না।
আপনি যদি ধর্ম বিশ্বাস করতে চান সেটা আপনার ব্যাপার। অন্ধ হলে তো প্রলয় বন্ধ থাকে না। আপনি যদি মনে করতে চান যে-
১। সূর্য নয় পৃথিবী ঘোরে।
২। মানুষ চাঁদে পৌছাতে পারেনি, পারবে না।
৩। পরকালে ভাত না খেয়ে খেজুর খাবেন।
৪। হুরপরী ও গেলমানদের সাথে xxx লাইফ চালানো আনন্দের।
৫। অন্যধর্মে বিশ্বাসীদেরকে কাফের, মুশরিক বলে গালি (বিশেষ বিশেষণ ব্যবহার) দেয়া উচিত।
৬। জ্বীন-পরী প্রভৃতি অলৌকিক কল্পনা সত্যি।
৭। অন্য ধর্মাবলম্বীরা সবাই দোজখে যাবে আর শুধু মুসলমানরাই বেহেশতে যাবে।
৮। মুসলিমরাই সাচ্চা মানুষ, আর বাকীরা সব বেঈমান, বদমাশ, অসৎ, অপরাধী।
৯। কোরান সকল জ্ঞানের উৎস।
১০। বিশ্বের সকলে একদিন মুসলমান হয়ে যাবে(!?)।
তাহলে তা মনে করতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে কোন কিছু মনে করার উপর কোনরকম জোর করা সম্ভব নয়।
নাস্তিকতা হল একটা উপলব্ধি। এর সৌন্দর্য আপনাকে নিজেকেই বুঝতে হবে। গোলাপ ফুল কেমন সুন্দর সেটা যতক্ষণ আপনি নিজের চোখে দেখেননি, ততক্ষণ বুঝতে পারবেন না। আপনি গুড়কেই যদি পৃথিবীর সবচাইতে সুস্বাদু মিস্ট পদার্থ বলে মনে করেন, তাহলে মধুর আস্বাদ আমি কি করে বোঝাব? আপনাকে পড়তে হবে। 'এক বইয়ের পাঠক থেকে সাবধান'-হুমায়ুন আজাদের কথাটা কিন্তু খুব সত্যি। তবে এর আলোচনা ভিন্ন।
দর্শন পড়ুন, সমাজবিজ্ঞান পড়ুন, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব এমনকি সাহিত্যতত্ত্ব পড়লেও বুঝতে পারবেন অনেক কিছু। প্রকাশ হয়ে যাবে অনেক অন্ধকারাচ্ছন্ন গলিঘুপচি। নিজেই বুঝতে পারবেন, আপনি কোন দলের। আলোর নাকি অন্ধকারের?
আপনার সামহোয়ার ব্লগে গিয়েছিলাম। লগইন করতে হয় বলে মন্তব্য করতে পারলাম না। দু:খিত।
অগ্নিদা'
ReplyDeleteসামহোয়ার ইন আর আমারব্লগে একটা একাউন্ট করেই ফেলেন!
আমি ইশতেহারগুলি সামইনে দিচ্ছি।
আরিফ।
আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু ভাই এইসব ফোরামগুলির খুচরো আড্ডা অনেক প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করে ফেলে। আর তাছাড়াও লোড হতে অনেক সময় নেয়। তবে ইচ্ছা আছে সদস্য হবার।
ReplyDelete"আপনি ইশতেহারগুলি সামইনে দিয়েছেন"- বিষয়টা ভাল বুঝলাম না। ব্যাখ্যা করবেন কি?
ধন্যবাদ।
Post a Comment