বিশ্বাস করার স্বপক্ষে কিছু ভাল ও মন্দ কারণ ৩

আমি এই প্রথা বা ঐতিহ্য সম্পর্কে পরে এই চিঠির শেষে আলোচনা করব। কিন্তু তার আগে বিশ্বাসের অন্য দুই খারাপ অজুহাত ‘কর্তৃপক্ষের আদেশ‘ ও ‘প্রত্যাদেশ‘ সম্পর্কে কিছু বলে নেই।

কর্তৃপক্ষ (Authority) এই জিনিসটাকে আমরা খুব মানি। কারণ এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আমাদের কাছে আসে। আইন বা নীতিগত সমর্থন আমরা এখান থেকে পেয়ে থাকি। রোমান ক্যাথলিক চার্চে পোপ হচ্ছেন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। যেহেতু তিনি একজন পোপ সেহেতু মানুষ বিশ্বাস করে যে তিনি কোন ভুল করতে পারেন না। ইসলাম ধর্মের মধ্যেও তেমনি দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ আয়াতুল্লাহ হলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা মান্যবর কর্তৃপক্ষ। এই দেশের অনেক মুসলমান খুন করার জন্য তৈরি হয়ে আছে। কারণ এর অনুমতি তারা ঐ আয়াতুল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছে।

এর আগে আমি তোমাকে বলেছিলাম, রোমান ক্যাথলিকরা ১৯৫০ সালে ঘোষণা করে যে মেরির শরীর স্বর্গে তুলে নেয়া হয়েছে এ কথা তারা আগে থেকে বিশ্বাস করে আসছিল। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি যে পোপ নিজেই একথা বলেছেন। তিনি নিজে একথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। আর পোপ যেহেতু বলেছেন সেহেতু তা অবশ্যই সত্য এবং মান্য। এর কোন যথার্থ কারণ নেই, তারপরও পোপ বলে কথা। অন্য আর কারও কথার চাইতে পোপের কথাকে তোমার বেশি বিশ্বাস করতেই হবে। বর্তমান পোপ (১৯৯৫) তার অনুসারীদেরকে একাধিক সন্তান নেবার নির্দেশ দিয়েছেন। মানুষ যদি এই কর্তৃপক্ষীয় নির্দেশকে বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নিত তাহলে তা পরিণামে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ বয়ে আনত। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে রোগ-ব্যধি, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি লেগেই থাকত।

হ্যাঁ, বিজ্ঞানের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেবার সময় আমরা অন্যের উপর নির্ভর করে থাকি। যেমন, আমি নিজে আলো যে এক লক্ষ ছিয়াছি হাজার মাইল বেগে ছুটছে তার প্রমাণ কখনো দেখিনি। আমি এ কথা বইতে পড়েছি। এখানে বইকে আমি কর্তৃপক্ষ বলে মনে করেছি। তবে এটা ওই কর্তৃপক্ষের চেয়ে ভাল। কারণ কর্তৃপক্ষকে তুমি কোন প্রশ্ন করতে পারবেনা। কিন্তু যথাযথ প্রমাণসাপেক্ষে বই লেখা হয় আর ইচ্ছে করলে যে কেউ এই প্রমাণগুলো নিজে নিজে পরীক্ষা করতে পারে। এটা খুবই স্বস্থিদায়ক। কিন্তু মেরির শরীর স্বর্গে তুলে নেয়া হয়েছে এ ঘটনার স্বপক্ষে একটা ছোট প্রমাণও কোন প্রিস্ট (ধর্মনেতা) দিতে পারবে না।

বিশ্বাসের পক্ষে তৃতীয় খারাপ কারণ হল প্রত্যাদেশ বা ঐশী বাণী। মেরির সশরীরে স্বর্গারোহন বিষয়ে যদি পোপকে ১৯৫০ সালে জিজ্ঞাসা করা হত তাহলে তিনি প্রত্যাদেশের কথা বলতেন। তিনি কিভাবে এই প্রত্যাদেশ পেয়েছেন? একটু কল্পনা করে নিতে হবে। একদিন তিনি নিজের ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে প্রার্থনায় বসেছিলেন। ঈশ্বরের কাছে বারবার সাহায্য চাইলেন। নিজে নিজেই অনেক চিন্তা করলেন। তারপর নিজেই এক অনির্দেশ গভীর বিশ্বাসবোধ থেকে নিজ ধারণাকে বিশ্বাস করা শুরু করেন। বিশ্বাসী মানুষ যখন নিজের অন্তরের অন্ত:স্থলে এক গভীর বিশ্বাস বহন করেন, যখন নিজের মনের গহীনে এক ভিন্নরকম অনুভূতিকে চিহ্নিত করতে পারেন আর তখন তারা কোনরকম প্রমাণ ছাড়াই তাকে সত্য বলে মেনে নেন। এটাকে তারা প্রত্যাদেশ বা ঐশী অনুভূতি বলে থকেন। প্রত্যাদেশের দাবী শুধুমাত্র পোপ করেছেন তা নয়, অন্য ধর্মের মানুষরাও প্রত্যাদেশের দাবী করেন। বিশ্বাসের স্বপক্ষে প্রত্যাদেশকে তারা খুব জোরালো প্রমাণ বলে মনে করেন। কিন্তু সত্যিই কি এটা ভালো কারণ?

(অসমাপ্ত)

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post