আমি কেন মুসলমান নই - ০১

মূল লেখক: ইবনে ওয়ারাক
গ্রন্থ সমালোচনা করেছেন: তসলিমা নাসরিন

[সালমান রুশদী বিষয়ক জটিলতার কারণে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা মত প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার উপর একটা রিপোর্ট ছেপেছিল (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯)। রিপোর্টে বলা হয়েছিল -"আয়াতুল্লাহ খোমেনি হয়তো এ দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) ইসলাম ও মুসলমানত্বকে সমালোচনা করে লেখালেখির প্রকাশ হওয়াকে বন্ধ করতে পারবেন।" নিউইয়র্ক টাইমসের এই ভবিষ্যতবাণী ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দেখা গেছে ইসলাম ও মুসলমানের ভণ্ডামী নিয়ে লেখালেখি থেমে নেই। ড. মোরে (Dr. Morey) তার 'ইসলামী উপদ্রব' (The Islamic Invasion) (১৯৯২) লেখার জন্য এবং আনোয়ার শেখ তার বক্তব্যের জন্য পাকিস্তানের মোল্লাদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে ফতোয়া লাভ করেছেন। এখন আমরা আর একটি সাহসী লেখা ইবনে ওয়ারেকের কাছ থেকে পেয়েছি। তার এই "আমি কেন মুসলমান নই" শীর্ষক বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে, ১৯৯৫ সালে।

ওয়ারেকের এই বইটি এ ধরণের বিষয়ে ইংরেজি ভাষার প্রথম বই। এটাই প্রথম ইংরেজি বই যেখানে ইসলামের প্রধান নীতিগুলোকে সন্দেহ ও সমালোচনার দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর যথারীতি এই বইটি মুসলমান, খ্রিস্টান এমনকি ইহুদীদের নিকট থেকে ব্লাসফেমির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে যেতে পারে।]

এবং এখনও আমি প্রত্যাশা করি- এই বইটি তার লেখককে কোন ফতোয়া এনে দেবে না। সাধারণভাবে এর কারণ হল, তিনি এই বইতে কোন অকারণ ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ বা নিন্দাবাক্য প্রকাশ করেননি। বরং তিনি সম্পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক ও যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছেন। কোরান, হাদিস, মুসলিম ঐতিহাসিক, পশ্চিমা পণ্ডিত প্রমুখের লেখা থেকে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। ইবনে ওয়ারাক যে সব ধ্বংসাত্মক সন্দেহর উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে, আশা করা যায় চিন্তাশীল মুসলমানেরা তার উত্তর দেবেন।

ইবনে ওয়ারাক প্রধান যে বক্তব্যের উপর জোর দিয়েছেন, তা হল- সমস্যাটি আসলে ইসলামী মৌলবাদের মধ্যে নয়, এর ভিত্তি রয়েছে খোদ ইসলামে। পশ্চিমা মিডিয়ার কাছে আমরা কোন উচ্চ নীতিবাদিতা বা নৈতিক সাহস প্রত্যাশা করি না। কিন্তু যখন ইসলামের বিশ্বাস নিয়ে সৎ সমালোচনা করা হয় তখন পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীরা যেন মুখে তালা লাগিয়ে ফেলেন। রুশদী বিষয়ক ঘটনা নৈতিক দিক দিয়ে সাহসী ও নৈতিক দিক দিয়ে কাপুরুষদের মধ্যে একটি স্পষ্ট ভেদরেখা টেনে দেয়। আমরা জেনে যাই যে, নীতিবোধের দিক দিয়ে সাহসী ব্যক্তিরা আসলে সমাজের একটা সংখ্যালঘু অংশমাত্র। ইসলামী আত্মপক্ষ সমর্থনকারীরা অসৎভাবে সন্ত্রাসী ও বর্বর কার্যক্রমকে গুরুত্বহীন করে তুলতে চায়। তারা বলে যে এসব আসলে "ইসলামী মৌলবাদ"। আর এর সাথে প্রকৃত ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।

তারা দাবী করে যে 'আসল ইসলাম হল শান্তিময়, আসল ইসলাম মানবাধিকারকে সম্মান করে, আসল ইসলাম নারীর অধিকারকে সমান চোখে দেখে ইত্যাদি'। ইবনে ওয়ারাক এইসব বোগাস দাবীকে বৌদ্ধিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি যথেষ্ঠ প্রমাণ দেখিয়ে বলেছেন, আলজেরিয়া, আফগানিস্তান বা সুদানের যেসব ঘটনাকে নৃশংসতা বলে মনে করা হয়, তা কোরান, হাদিস, সুন্নাহ ও শরীয়ার মূল নির্যাস থেকেই উৎসারিত হয়েছে।

ভিন্নভাবে বললে বলা যায়, আয়াতুল্লাহ খোমেনী ইরানে যা প্রয়োগ করে চলেছেন, তা কোন বিচ্যুতি নয়, এটাই ইসলাম, সত্যিকারের ইসলাম। কারণ একথা ভুললে চলবে না যে, খোমেনী তার জীবনের বেশিরভাগ সময় ইসলাম নিয়েই পড়শোনা করেছেন। যখন তিনি রুশদীর মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা দেন তখন আসলে তিনি মুহম্মদের তৈরি পূর্বদৃষ্টান্তকেই অনুসরণ করেছেন।

অসমাপ্ত

1/Post a Comment/Comments

  1. "আমি কেন মুসলমান নই"

    বইটির ডাউনলোড লিংক

    http://www.mediafire.com/download.php?emuzmttnnwn

    ডাউনলোড ও শেয়ার করুন বেশি করে।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post