বিশ্বাসকে বিশ্বাস

ক্রিস্টোফার হিচেনস

মূল লেখা: Belief in Belief - Christopher Hitchens.

একটি প্রশ্ন সম্পর্কে আমি প্রায়ই (এবং সবসময়) খুব আগ্রহ বোধ করি। সেটা হলঃ আমি জানি যে আমি কোনরকম স্রষ্টা বা কোন ধর্মে বিশ্বাস করি না। আমি বিপরীতপক্ষকে আমার অবস্থান এমনভাবে ব্যাখ্যা করে বলতে পারবো যে তারা বিষয়টা অন্ততঃ বুঝবে। যারা বলে যে 'তারা বিশ্বাস করে' তারা কি এরকম করে বলতে পারবে? সংক্ষেপে বলা যায় যে, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা কি এই পুরাতন বিতর্ক সম্পর্কে যা চিন্তা করে তা কি সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারবে?

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা দরকার। সম্প্রতি এটা প্রকাশ হয়ে পড়েছে যে, মাদার তেরেসা গত অর্ধশতকে 'যিশুখ্রিস্টের নৈশভোজের উৎসবে' যিশুখ্রিস্টের উপস্থিতি অনুভব করতে পারেননি। কিংবা তার প্রার্থনা ঈশ্বর শুনছেন এমনটাও তার মনে হয় নি (তার হতাশাপূর্ণ চিঠিগুলি নিয়ে লেখা 'মাদার তেরেসা, এসো আমাকে আলোময় করো' নামক সাম্প্রতিক বইটি দেখুন)। একারণে তার ভক্ত শুভানুধ্যায়ীরাও তাকে তেমন বুদ্ধিদীপ্ত বলে মনে করেনি। তিনিও তার সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সাথে অনবরত এক পুরাতন পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন।

বিশ্বাসকে আরও অসংযত ও মর্ষকামী হিসেবে উপস্থাপন করতেও তার দ্বিধা ছিল না। 'বিশ্বাসকে বিশ্বাস' বিষয়ে ড্যানিয়েল ডেনেটের হাইপোথিসিস যে সিদ্ধান্ত টেনেছে তা সত্যিই অসাধারণ। এই অদ্ভুত আইডিয়াটা এমন যে 'বিশ্বাস' নিজে হয়তো বিশৃঙ্খল, এলোমেলো এবং হাস্যকর রকমের মজার। কেবল নিজেকে জাহির করার ভঙ্গি দেখে মনে হয়, হয়তো এই দায়িত্বটাই বিশ্বাসের একমাত্র অবলম্বন।

যদিও আমি তাকে কখনও কখনও ভন্ড বলে উল্লেখ করেছি, (দুভেলিয়ার পরিবারের মতো দরিদ্র পরিবারের প্রতি নিষ্ঠুর ধনীদের পক্ষে থাকা এবং তার অন্যান্য দূর্নীতিপূর্ণ কাজগুলোর জন্য) কিন্তু এখন মাদার তেরেসাকে একজন ফালওয়েল, হ্যাগারড, শার্পটন অথবা একজন রবার্টসনের সাথে একই সারিতে রাখতে দ্বিধা করবো। এই মানুষগুলো জীবনে কখনও কোন সত্যিকারের কাজ করেনি। এবং আসলে তারা একধরণের জীবাণুর মত। তারা তাদের সহজ জীবনের সৌভাগ্যময় প্রতিটি দিন ধোঁকাবাজির প্রচারণা দিয়ে শুরু করে। তাদের কাছে ধর্ম ব্যবসা করার একটি উপায় অথবা হুমকি দিয়ে টাকা কামানোর ফন্দি মাত্র।

আমি মনে করি একই কথা শিশু ধর্ষণের (কেন যে আমরা এই প্রসঙ্গে অপেক্ষাকৃত কোমল শব্দ 'নির্যাতন' ব্যবহার করি?) অভিযোগে দণ্ডিত অসংখ্য যাজকদের ক্ষেত্রেও খাটে। তাদের চরম অপরাধটি কোনক্রমে সাধারণ ভণ্ডামী নয়। কোন প্রিস্ট দশ সেকেন্ডের জন্যেও একথা বিশ্বাস করবেন না যে ঐশী বিচার তার মৃত্যুহীন আত্মাকে এমন কোন শাস্তি দিতে পারে। চরম অশ্লীল, নোংরা, মারাত্মক অপরাধীদেরকে যে সব শাসক শাস্তি থেকে বাঁচায়, তারাও এমনটা বিশ্বাস করে না।

কিন্তু ধর্মের যে দিকটি ফন্দিবাজ ও ঝগড়াটে তার যুদ্ধ উন্মাদনা, বর্বরতা, নৃশংসতা, উৎপীড়ন, নির্যাতনের কাহিনীটুকুই সব নয়। যারা অন্যকে সাহায্য করে, নম্রভদ্র জীবন যাপন করে তাদের বিষয়ে কি বলবেন? তারা তো নবী, ধর্মীয় কাহিনী, পবিত্র আত্মা এবং এই ধরণের নানারকম উপমা-রূপকের সাথে নিজেদের সুকীর্তিগুলোকে এক করে দেখে। এই ধরণের মানুষদের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি- তারা যা বোঝাচ্ছে তা সম্পর্কে ঠিক যা বলতে চায় কিংবা তারা যা বলছে তা যে ঠিক কি বোঝায় - তা অনুধাবন করে আমি অবাক হয়ে যাই।

মূল লেখার লিংক

অসমাপ্ত

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post