কেন আমি নাস্তিক থেকে গেলাম - শবনম নাদিয়া -০২

কেন আমি নাস্তিক থেকে গেলাম
- শবনম নাদিয়া
(Why I remain an atheist- Shabnam Nadiya)
অনুবাদ: অগ্নি অধিরূঢ়

পূর্ব প্রকাশের পর

খুব অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ যা বলছে তাকে সন্দেহ করা থেকে আল্লাহর উপস্থিতিতে সন্দেহ করা শুরু করে দিলাম। কিন্তু এটা সহজে হয় নাই। আমি দেখলাম যে, যাদেরকে আমরা যুক্তিবাদী কিংবা অনুভূতিপ্রবণ মানুষ বলে মনে করি, তারাও ইসলাম সম্পর্কে কোন স্পর্শকাতর প্রশ্নকে সহানুভূতির সাথে গ্রহণ করেনা। প্রশ্নকে পছন্দ না করার একটি অবকাঠামো দাড়িয়ে গেছে। কেউ কেউ আছেন যারা উত্তরের সাপেক্ষে প্রশ্নকে পছন্দ করেন। আবার আরেক ধরণের মানুষ আছেন (যাদের আমরা গণতান্ত্রিক, উদারমনা, আধুনিক চিন্তার মুসলমান বলি), এরা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টের উপর করা প্রশ্নকে পছন্দ করেন। এসব প্রশ্নের উত্তর সবসময় যুক্তিকে বাদ দিয়ে বিশ্বাসকেই প্রতিষ্ঠিত করে। এই সমসাময়িক সময়গুলোতে আমার বিশ্বাস হালকা হয়ে গিয়েছিল। আমি একটি উপসংহারে পৌছে গিয়েছিলাম। আমি ইসলামের বিভিন্ন বর্বর-অসভ্য নিয়মকানুনগুলোকে চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। ইসলামের বিভিন্ন অসঙ্গতি, স্ববিরোধী বক্তব্যগুলোকে সুচারুভাবে বিশ্লেষণ করে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আসলে এই ধর্ম হাজার বছরের পুরনো একটি মতবাদ ছাড়া আর কিছুই নয়। মোহাম্মদের অনেক আচরণ এবং কাজ (বহুগামীতা, শিশুবিবাহ, নারীদেরকে গণিমতের মাল হিসেবে ঘোষণা দেয়া) দেখে মনে হয় তিনি আসলে তার নিজের সময়ের সন্তান ছিলেন। এই বিশ্বাস আমি ততদিন পর্যন্ত বহন করেছি, যেদিন এক অন্যরকম উপলব্ধি আমি অনুভব করলাম। আমার মনে হল, যদি আধুনিক চিন্তার আলোকে ইসলামী ভাবধারাকে বর্বর ও অসভ্য বলে মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে ইসলাম ও নবী মোহাম্মদের উপযোগীতা আসলে মানবজাতির ইতিহাসের এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। অথচ এখনও কোরানের বাণীকে সকল সময়ের জন্য এক ঐশী উপহার বলে মনে করা হয় এবং নবীর জীবনকে ভালো মুসলমানের জন্য আদর্শ বলে প্রচার করা হয়।

আমি যা ভাল বলে মনে করি তার সাথে ইসলামের ভিন্ন জিনিসগুলোকে (যেসব বিষয়কে আমার নোংরা বলে মনে হয়েছে) কিভাবে এক করবো? আমি দেখেছি যে ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরা দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ। কিভাবে আমি নিজেকে এই ধরণের হীনস্থানে রাখবো, আমিত্ব নিয়ে আমার যে গর্ব, তাকে কিভাবে আমি অস্বীকার করবো? আমি প্রথমেই ধর্মকে ছুঁড়ে ফেলেছি শুধুমাত্র এই ছোট কারণে যে যদি আমি কেতাবে যা লেখা রয়েছে তাকে বিশ্বাস করে যাই, তাহলে আমার মনের অবাধ বিচরণের জন্য কোন প্রশস্ত জায়গা থাকবে না। আরও এজন্য যে ধর্মীয় নিয়মকানুনগুলো সংকীর্ণ মানসিকতার এবং এগুলো কল্পনার অসংখ্য সম্ভাবনাকে বিকশিত করার বদলে আমার পৃথিবীকে ছোট করতে বাধ্য করে। এটা কোন বিষয় নয় যে, আমি কত বেশি পড়েছি, কত বেশি আমি জানি, আমার বুকে মানুষের জন্য কত বেশি ভালবাসা ও আগ্রহ রয়েছে তা কোন বিষয় নয়। আমার প্রজ্ঞা, আমার বুদ্ধি, হাসি-আনন্দের জন্য আমার পক্ষপাত- এসব কোন বিষয় নয়। আমি কখনো, কোনক্রমেই একেবারে ক্ষুদ্রমনা পুরুষটির মত ভাল বলে বিবেচিত হব না। কারণ আমি একজন নারী। আমি একজন পুরুষের বীজ বপনের জন্য জমি মাত্র। আমি একজন যোদ্ধার কাছে শুধুমাত্র একজন গনীমতের মাল। সন্তান জন্মদানের ক্ষমতার কারণে আমি সময়ে সময়ে অপবিত্র, একজন পুরুষের মত করে আমার কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়, পুরুষরা আমার প্রেমে পরে সেজন্য আমি দোযখের দ্বার। এইসব বিষয়কে মেনে নিয়ে কিভাবে আমি জীবন যাপন করবো? আমি তাই এসব অপধারণা বিশ্বাস করা বন্ধ করলাম। কিন্তু তাহলে এসব অপবিশ্বাসের বিকল্প কি? বরং অবিশ্বাস আমাকে যা দিতে চেয়েছে, বিশ্বাস তা দিতে পারেনি। বিষয়টা ভেঙ্গেই বলি।

নাস্তিকতা মানুষকে পূর্ণবয়স্ক বলে মনে করে- অথচ ধর্মগুলো তা করে না। নাস্তিকতা মনে করে মানুষ নিজে নিজে সৎ মার্জিত জীবন যাপন করতে পারে, কারণ ভাল কাজ করা মানুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। ভাল কাজ করানোর জন্য মানুষকে পরকালে শাস্তির ভয় দেখানো বা হুমকি দেয়া কিংবা বেহেশতের লোভ দেখানোর কোন দরকার নেই। ধর্ম মানুষের মানবীয় সামর্থকে ছোট করে দেখে। ধর্মীয় বিশ্বাস এমন মনে করে যে যে, একজন পুরুষের নিজের মনমতো করে স্ত্রী, সন্তান, পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের বিশ্বাস করা উচিত নয়। যদি দোজখের আগুনে পুড়ে যাওয়ার ভয় না থাকে তাহলে নারীরা নিজেদের মর্যাদা নষ্ট করবে এবং তার পরিবারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করবে। অবিশ্বাস আমার প্রতি যে শ্রদ্ধা দেখিয়েছে, আমাকে যে মর্যাদা দিয়েছে তার কাছে ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন তুলনাই চলে না। যদি আমি ধর্মে বিশ্বাসী হই, তাহলে নিজেকে নারী হিসেবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে মর্যাদায় অবনমিত করতে হবে। আমি যদি ধর্মীয় ভাবাপন্ন প্রাণী হই, তাহলে বলতে হবে যে, তারকারাজির দিকে তাকিয়ে তার (His) গুণগান করার জন্য এক ঐশী উদ্দেশ্যে আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এইসব ধারণার বিপরীতে আমি এই সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছি যে, আমি একজন মানুষ, প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসে সর্বোচ্চ স্থানে আমার অবস্থান এবং আমার নিজের সামনে রয়েছে অসীম সম্ভাবনা, আমি একজন সীমানাহীন আকাশ, আমি সূর্যের হাসি। আমার নিজের জাহাজের ক্যাপ্টেন আমি নিজেই। আমার বালো কিছু করা উচিত, কারণ আমি শয়তান নই। এটা শুধু এ কারণে নয় যে মৃত্যুর পরে আমি ভাল সময় কাটাবো। আমি ভাল কিছু করবো কারণ তা ভাল। ভাল কিছু করার জন্য আলাদা কোন লোভ বা হুমকি আমার দরকার নেই। একজন মানুষ হিসেবে অন্য সমস্ত প্রাণীদের চাইতে আমার এক অনন্য ক্ষমতা আছে, যার দ্বারা আমি ভাল মন্দ'র পার্থক্য করতে পারি। আমার নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগানোই এর জন্য যথেষ্ঠ। আমার এই ছোট্ট জীবনে এই বিষয়টি ও বিশ্বাসের প্রকৃতি নিয়ে কয়েকজন বিশ্বাসীর সাথে আলোচনা করেছি। এক পর্যায়ে তারা প্রত্যেকেই আমার অবিশ্বাসের কথা জেনে অপমানিত বোধ করেছেন। তাদের বেশিরভাগ আমাকে বলেছে যে যেভাবেই আমি তৃপ্তি খুঁজে পাই না কেন, এই পৃথিবীর জীবন কতই না ক্ষণস্থায়ী ও মূল্যহীন। আমার মধ্যে বিশ্বাসী হবার জন্য কতটা যে আকুল আকাঙ্ক্ষা তা বুঝতে তাদের প্রত্যেকে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বাসী থাকার অর্থ সবকিছু জানে ও সবকিছু দেখছে এমন একজন পরম পিতা আমার দিকে সবসময় তাকিয়ে আছে। আমার জীবনে কিছু খারাপ ঘটলে তিনি কোন না কোন উপায়ে তার প্রতিকার করবেন। এ জীবনে না হলে পরকালে করবেন।

এটা জেনে যে শয়তান বিজয়ী হতে পারবে না, এই পৃথিবীতে নিরাপরাধের উপর নির্যাতনের প্রতিশোধ নেয়া হবেই। পৃথিবীর সবকিছু ঠিকঠাক রেখে আল্লাহ বেহেশতে বসে আছেন- এর চাইতে স্বস্তিদায়ক আর কি হতে পারে! সবকিছু দৈবের হাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি বেশ কৌতুকপ্রদ। বিশ্বাস করার জন্য অনেককিছু আমাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমি নাস্তিকতার পাথুরে, বন্ধুর পথে পা বাড়িয়েছি। আমি দৈব নিরাপত্তার আচ্ছাদনকে প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু এমন একটি জীবন পেয়েছি যা আমাকে জীবনের, আমার অস্তিত্ত্বের প্রত্যেকটি বাঁক, ভাঁজ, ফাটল, মোড় আবিষ্কার করতে ও সেগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ দিয়েছে। আমি প্রশ্ন করেছি এবং ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করেছি। নিজেকে একজন নাস্তিক হিসেবে ঘোষণা করছি। কারণ আমার জীবনে ধর্মের অপ্রয়োজনীয়তা ও অসারতার কোন উত্তর খুঁজে পাইনি। কারণ ধর্ম মানুষ হিসেবে আমার সক্ষমতাকে সংকীর্ণ করে তুলেছে। আমি নাস্তিক হিসেবে থেকে গেছি কারণ 'আমি কে' এর উত্তর জানার জন্য ধর্মের যে কোন প্রয়োজন নেই তা আবিষ্কার করতে পেরেছি।

মূল লেখার লিংক
সমাপ্ত

18/Post a Comment/Comments

  1. রিয়াজুল ইসলামApril 29, 2009

    শবনমের অনুভূতির প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। সত্যি, তার প্রতি সেই হুজুর খুব খারাপ আচরণ করেছেন।

    ReplyDelete
  2. শবনমের সমস্যাটি কি শুধু তার একার? আমার তা মনে হয় না। বাংলাদেশের বেশিরভাগ আধুনিক, মুক্তমনা, শিক্ষিত, সচেতন নারীদের হুজুর বা মোল্লাকেন্দ্রিক অনুভূতিটিগুলো প্রায়ক্ষেত্রে একই রকম। তবে যারা দাস মনোভঙ্গীর, তাদের কথা আলাদা।
    মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  3. who are u ?think again and again then say

    ReplyDelete
  4. But, valo how ar jonnon jodi sudhu amar amitto enough hoto, tahol a ERSAD SIKDER er amitto ki dosh koresilo, Ki dosh koresilo Sheikh mujiber Amitto keno tak khun hote holo?
    Ki e ba gun chilo apnar AMitter j karon a apni goru, chagol na hoy a manush er ATTa, akriti pelen?
    Justify yourself.......
    Don't be emotional and subidhabadi..........

    ReplyDelete
  5. Asole amar amitter chey external uncontrollable environment dara amra besi influencial so .....
    Do, you think the environment is magically maintained?

    ReplyDelete
  6. She needs more reading and thinking...............
    and treatment,,,,,,,,,,,,,

    ReplyDelete
  7. আপনাদের মন্তব্য পরে আমি বুঝতে পারছি না আপনারা কোন যুক্তি ছাড়া কিভাবে কথাটার বিরোধিতা করছেন। যে প্রতিনিয়ত তার গুনগান শুনতে চায়, যার গুনগান না করলে আমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে, তাকে যে যাই ভাবুক, আমি উদার ভাবতে পারি না তাকে আমি কুপমন্ডুক ও ছোটো মানসিকতার মনে করি। আপনারা যুক্তির ধারের কাছেও নেই, যুক্তি শুধু তখন মানেন যখন নিজেদের যুক্তি মানলে আপনাদের লাভ হয়। আশা করছি শ্রীঘ্রই আপনাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন আসবে।

    ReplyDelete
  8. নাস্তিকের মাইরে চুদি।

    ReplyDelete
  9. "আকাশ-মাটির অর্ন্তভূক্ত কোন কিছুই আমি অনর্থক সৃষ্টি করি নাই, যদিও কাফেরদের ধারণা তাহাই।
    অতএব তাহাদের আছে মর্মন্তুদ শাস্তি"।
    আলকুরআন।
    আপামনি মাত্র একটা বস্তুর নাম বলুন যা অনর্থক। যার কোন কাজ নেই।

    ReplyDelete
  10. ভাল লেখা বস। এাগিয়ে চলুন। নতুন নতুন লেখা প্রকাশ করুন।

    ReplyDelete
  11. sister,
    you don't know why people need religion.
    because we have the duty to Allah who made whole world. Human always do wrong. But for this we should not give up religion. I am a theist. But I haven't much fear of jahannam.But I am conscious about my duty. I also know Allah need not it.
    I do it only for myself.

    ReplyDelete
  12. ano, alla didnt made world. Human dont do wrong always. U have ignorence about humanity and rcience. U r a good man, u dnt need fear to do ur duty, so why do u suporting a false dogma named relegion.

    ReplyDelete
  13. I want to say you that you are motivated by misconception about Islam. You should know that there are many wrong thought about Islam in this subcontinent. So you should learn about Islam from its main sources like Quran and authentic Hadith. You will see some verses of Quran that may be wrong apparently to you but you should justify those verses with an analytical learning and sometimes the translation may be wrong. So you should contract with a learned person.

    ReplyDelete
  14. শারমিন আপনি শুধু শাস্তির কথাই বললেন। বললেন আপনি জাহান্নামের দ্বার একটা পুরুষের জন্য। আপনি নুন্যতম ৭০ জন পুরুষের জাহান্নাম যাওয়ার কারণ হবেন যদি সেভাবে না চলেন। কিন্তু সেভাবে চললে আপনি নুন্যতম ১০০০ অলির চেয়েও আল্লাহর কাছে প্রিয়। দেখুন আল্লাহ নিজেই বলছেন হে নবী! আমনি তাদের প্রশ্ন করুন। কোথাও প্রশ্ন করাকে নিষেধ করা হয়নি শুধু মাত্র আল্লাহ তা'আলাকে নিয়ে প্রশ্ন করা ছাড়া। কারণ আপনি যে আজকের নাস্তিক সেই নাস্তিকতার কথাই আল্লাহ বলেছেন যে, আমাকে নিয়ে প্রশ্ন করো না তাতে তোমরা নাস্তিক হয়ে যাবে।

    ReplyDelete
  15. আমার আপনার কথা এবং আস্তিকদের কথা শুনে আসলেই খারাপ লাগছে । আশা করি নতুন জীবনে ভাল থাকবেন

    ReplyDelete
  16. লেখার মাঝে লজিক আছে, কিন্তু কথাও জেন খটকা লাকতাসে

    ReplyDelete
  17. চালিয়ে যান এই রকম অনেক ভণ্ড নাস্তিক দেখছি ,যখন বিপদে পরে তখন আল্লহকে স্মরণ করে আস্তিকদের থেকেও বেশী।

    ReplyDelete
  18. its clear to me anti-islamist are paying you for your articles and writing ,only for some money (or some benefits) you r kneading true and false about Islam ?Didn t Allah (SWT) look after His creation.Any how you should mention true substances about Islam otherwise you r nothing but a
    ill-starred .

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post