ইসলামের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য - ইবনে ওয়ারাক - ০৩

The Totalitarian Nature of Islam
IBN WARRAQ

অনুবাদ: অগ্নি অধিরূঢ়
পূর্ব প্রকাশের পর

ইজমা

নবীর নামে একথাটা প্রচলিত যে, তিনি বলেছেন "আমার সমাজ কখনও ভুল এর সাথে আপোষ করবে না"। এর ফলে মুসলিম চিন্তাবিদরা সামগ্রিকভাবে এই নির্ভুল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন। Hurgronje যেমন বলেছেন-"এটা হল যাজকদের রীতির মত খ্রিস্টানদের ক্যাথলিক মতবাদের অনুরূপ একটি ব্যাপার।" দুটোর মধ্যে প্রধানতম মতাদর্শিক মিল হল যে এরা গণতান্ত্রিক নয়। জনগণের মতকে স্পষ্টভাবে বাধা দেয়া হয়েছে। এটাই তথাকথিত উপযুক্ত, শিক্ষিত ও চিন্তাশীল কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক মিল।

অবশ্য এখানেও বিতর্ক আছে। কার ইজমা গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে কেউই একমত নয়। কেউ মনে করে মোহাম্মদের সঙ্গীসাথীদের ইজমা গ্রহণযোগ্য। আবার কেউ বা মনে করে মোহাম্মদের বংশধরদের ইজমা মেনে চলা উচিত। এরকম আরও আছে।

পণ্ডিতদের এই অভ্রান্ত মতবাদগুলির একটি সাধারণ ঐক্য আছে। মানুষ যেমন প্রত্যাশা করে, সেরকম 'কার্যকারণের স্বাধীনতা' এরা স্বীকার করে না। অগ্রসর মানসিকতাকে সীমিতকরণ ও জটিলতর মনোভঙ্গির পক্ষে এরা কাজ করে। এদের মতবাদ (ইজমাগুলি) ভবিষ্যতের 'স্বাধীন চিন্তা'র সম্ভাব্যতাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে। মানুষের নিজস্ব যুক্তি প্রবণতাকে বাধা দেয়ার ধারণাটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাপক উৎসাহিত করা হয়েছে, কারণ তা প্রবল ক্ষমতা অর্জনে দারুণ সহায়ক। ৯০০ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে ইসলামী আইন কঠোরভাবে ও অনমনীয়ভাবে কাঠামোবদ্ধ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে Schacht বলেন-
"যখন প্রত্যেক ভাবধারার পণ্ডিতেরা এই মর্মে একমত হন যে মানুষের সবরকমের প্রয়োজন আলোচনা করা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সমাধান করা হয়েছে তখন তারা সকলে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পৌঁছে গেলেন। একটি ঐক্যমত ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল যে, ইসলামী আইনকে স্বাধীনভাবে ব্যাখ্যা করার মত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা কারও আছে এমনটা আর কেউ মনে করতে পারবে না। এই সময় থেকে, আইনকে মুক্তচিন্তা দিয়ে আলোচনা করার মত যোগ্যতা আর কারও নেই, এমন মনে করা শুরু হল। এখন থেকে যাকে সকলের জন্য বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে বলা হয়েছে এরকম কোন কিছুর যে কোন রকমের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা ভবিষ্যত পরিমার্জনকে সর্বতোভাবে বাধা দেয়া হবে।
স্বাধীন যুক্তিবোধের দরজা বন্ধ করে দেয়া এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ার যা অর্থ তা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ধারা ও কর্তৃপক্ষের মতবাদগুলোকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নিতে হবে। ইসলামী আইন সেসময়ে অনেক কিছুর উপযোগী অভিযোজিত হয়েছিল অর্থাৎ নানারকম মনোভঙ্গির সাথে মানিয়ে নিয়ে নিজেকে বড় করে তুলেছিল, কিন্তু তারপর:
এটা নির্দিষ্ট ছাঁচে তৈরি হয়ে যায় এবং ভয়ংকর কঠোর রূপ ধারণ করে। প্রয়োজনীয় কঠোরতা ইসলামকে শত শত বৎসর ধরে অপরিবর্তনীয় রাখতে সাহায্য করেছে। অবশ্য একই কারণে ইসলামের রাজনৈতিক রূপটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে।এটা আসলে সর্বতোভাবে পরিবর্তনশীল নয়। বরং যে জায়গাগুলো পরিবর্তিত হয়ে গেছে সেগুলো আইনের তত্ত্বীয় দিকের সাথে বেশি সম্পর্কযুক্ত এবং এই অংশগুলো গঠনমূলক আইনের চাইতে অধিকতর কাঠামোবদ্ধ ছিল। সঠিকভাবে ধরলে দেখা যায় যে, ইসলামী আইন প্রাথমিক আব্বাসীয় যুগের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন এবং উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তিকালের সমাজ রাষ্ট্রের উন্নতির সাথে সাথে এটা বেড়ে উঠেছে।
Kiyas (কিয়াস)
কিয়াস হল সাদৃশ্যমূলক যুক্তিতত্ত্ব। এটাও অসংখ্য ইসলামী পণ্ডিতবর্গের দ্বারা সমর্থিত। তবে এটা অন্য তিন ইসলামী আইনের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় আইনকে মানবীয় যুক্তিতর্ক দিয়ে বিচার করাকে প্রত্যাখ্যান এবং মানুষের প্রত্যাশাকে বাধাহীন স্বাধীনতা দেয়া এ দু'য়ের মধ্যে এক ধরণের সমঝোতা করা এর প্রধান উদ্দেশ্য।
অসমাপ্ত
মুক্তমনায় প্রকাশিত

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post