ইসলামী আইনের সমালোচনা - ইবনে ওয়ারাক ০২

The Totalitarian Nature of Islam
IBN WARRAQ

অনুবাদ: অগ্নি অধিরূঢ়

ইসলামী আইনের সমালোচনা
পূর্ব প্রকাশের পর

মুসলিমদের পক্ষে কৈফিয়তদাতা এবং মুসলমানরা নিজে সবসময় এই দাবী করে আসছে যে, ইসলামে কোন মোল্লাতন্ত্র নেই। কিন্তু বাস্তবে এক ধরণের কেরাণী শ্রেণীর ব্যক্তি আছেন, যারা শেষ পর্যন্ত খ্রিস্টান যাজকতন্ত্রের মত, একইরকমভাবে ধর্মীয় ও সামাজিক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ঠিক ঠিকভাবে নিজ অধিকারভুক্ত করে নিয়েছে। এরা হচ্ছে সেই শ্রেণী যাদেরকে আমি "বিদ্বান ধর্মশাস্ত্রবিদ" বলেছি। অবশ্য এদেরকে আইনশাস্ত্রবিদ বলা যেতে পারে। এরা সমাজে "উলামা" নামে পরিচিত। কোরান এবং সুন্নাহকে (এবং হাদীস) অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখানোর কারণে উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন পেশাজীবী শ্রেণীর প্রয়োজন হয়ে পড়ল। এদের দায়িত্ব হল পবিত্র বাণীসমূহের অর্থ সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ধীরে ধীরে যখন তাদের উপর নির্ভরতা বেড়ে গেল, তখন তারা অনেক আত্মবিশ্বাস অর্জন করে ফেলল। তারা বিশ্বাস ও আইন সম্পর্কিত সব ধরণের বিষয়ে নিজেদের অসীম অধিকার দাবী করে বসল। 'ইজমা' মতবাদ তাদের এই অসীম প্রত্যাশাকে সমর্থন করেছে। Gibb যেমন বলেছেন -" এটা ছিল.... আইন ও তত্ত্বসমূহের উৎস হিসেবে ইজমাকে সনাক্তকরার পর তা প্রচলিত মতবাদ বিরোধী আইনী চরিত্র হিসেবে তৈরি হয়ে গেল এবং তা বাস্তবায়ন করা হল। তখন থেকে পবিত্র বাণীসমূহ সম্পর্কে এমন কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা বা এমনভাব কোন লাইন ব্যবহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, যা বিজ্ঞ আলেমদের দ্বারা প্রচারিত, গৃহীত, সমর্থিত কোন আইনগত সমাধান বা মতকে অস্বীকার করে তাকে "বিদ'আ" (Bid'a) বলা হল। যে কোন নতুন চিন্তা, ভাবনাকে বা কর্মতৎপরতাকে প্রচলিত মতবাদের বিরুদ্ধাচরণ বলা হল।"

উলামাদের ক্রমাগত প্রভাব বৃদ্ধি মুসলিম সমাজের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রসরতার অভাব বা সমালোচনামূলক ভাবনার বিকাশ না হওয়ার অন্যতম বড় কারণ। ইসলামের ইতিহাসের ধারাবাহিক পথে বিশেষ করে সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উলামারা সক্রিয়ভাবে মানব অধিকারের ধারণা, স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ এবং উদার গণতন্ত্রকে বাঁধা প্রধান করছে। যেমন: ইরানের ১৯০৬-১৯০৭ সালের সংবিধানের বিরুদ্ধে উলামার সাহিংসভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। একে অনৈসলামিক বা ইসলামবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র সম্পর্কে এই সংবিধানের যে বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল, তাকে উলামারা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। উলামারা এই আধুনিক যুগে পাকিস্তান, ইরান ও সুদানকে ইসলামীকরণ প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। এই তিন দেশে "ইসলামীকরণ বলতে ইসলামী মানদণ্ড অনুযায়ী মানব অধিকারের বিলুপ্তি বা তার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করাকে বুঝতে হবে"।

(৪) শরীয়া কি এখনও অখণ্ডনীয় রয়েছে?
আমরা হয়তো এই প্রশ্নটা করতে পারি যে, যে আইন হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল এবং সময়ের সাথে যার কোন বিবর্তন ঘটেনি, তা কেমন করে বিংশ শতাব্দীর উপযোগী বলে বিবেচিত হতে পারে। শরীয়া শুধুমাত্র প্রাথমিক যুগের আব্বাসীয় আইনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রকৃতিকে ধারণ করে। এটা পরবর্তীকালের সামাজিক অর্থনৈতিক, নীতিবোধ ইত্যাদি বিষয়ে যে কোন ধরণের প্রভাবমুক্ত থেকেছে। অসম্ভব মনে হলেও আমরা নীতিগত দিক থেকে অনেক অগ্রসরতা অর্জন করেছি। নারীকে নিজেদের ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারি এ ধরণের কোন সম্পত্তি মনে করি না। যারা আমাদের ধর্মবিশ্বাসের ভাগী নয় তাদেরকে সমান অধিকার দিতে আমরা দ্বিধা করি না এমনকি শিশু ও পশুদের অধিকার বিষয়েও আমরা সহমত পোষণ করি। কিন্তু যতদিন আমরা কোরানকে আধুনিক পৃথিবীর সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে চিরন্তন সত্য বলে সম্মান দেখাবো, ততদিন আমাদের কোন উন্নতি হবে না কারন কোরানের প্রধান নীতি হল নৈতিক অগ্রগতির ক্ষতিসাধন।

সমাপ্ত

IBN WARRAQ রচিত The Totalitarian Nature Of Islam শীর্ষক নিবন্ধটি Christopher Hitchens সংকলিত The Portable Atheist গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।

4/Post a Comment/Comments

  1. ঘনাদা‌র পোস্ট... http://www.somewhereinblog.net/blog/MiltonUK/28848965

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ। প্রদত্ত লিংকেও ভিজিট করলাম। মন্তব্যগুলোও পড়লাম। কিন্তু সামহোয়ারের সদস্য নই বলে প্রত্যুত্তর করতে পারলাম না।

    ReplyDelete
  3. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  4. নিলুফার, আপনি নিজেই আপনার মন্তব্য মুছে ফেলেছেন। তারপরও বলছি- আপনার অনুযোগ সর্বাংশে গ্রহণযোগ্য নয়। যা সত্যি আমি তাই প্রকাশ করছি।
    অগ্নিসেতু ভ্রমণ করার জন্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post