ইসলামের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য - ইবনে ওয়ারাক - ০১

The Totalitarian Nature of Islam
IBN WARRAQ

অনুবাদ: অগ্নি অধিরূঢ়

সম্ভবত চার্লস ওয়াটসন (Charles Watson) ১৯৩৭ সালে সর্বপ্রথম ইসলামকে সমগ্রতাবাদী বলে উল্লেখ করেন এবং বিভিন্ন উদাহরণ সহযোগে তা প্রমাণ করেন। তিনি বলেন-"অসংখ্য শিকড়ের মত নিয়মকানুন দিয়ে জীবনের প্রত্যেক স্তরে ইসলাম জোর করে ঢুকে পড়ে। এই বিধানগুলির প্রত্যেকটা ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেকটাই একজন মুসলমানের জীবন প্রণালীতে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামিক আইনের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি Bousquet ইসলামের দুই সাম্রাজ্যবাদী উপাদানকে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন (ক) ইসলামী আইন এবং (খ) ইসলামী জিহাদ যা একজনমাত্র কর্তৃপক্ষের কাছে বশ্যতা স্বীকার করার জন্য সমস্ত পৃথিবীকে বাধ্য করাকে চরম লক্ষ্য বলে মনে করে। আমরা জিহাদকে পরবর্তী অনুচ্ছেদগুলোতে বোঝার চেষ্টা করব। এখন আমরা ইসলামী আইনের আলোচনায় নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখব।

ইসলামী আইনের প্রধান লক্ষ্যই হল অনুসারী এবং মানবজাতির ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনকে কোনরকম বাছবিচার ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ করা। যাদের সহনশীল ও উদার ধর্ম যে কোন প্রকারে ইসলামী কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করতে বাধা দেয় তাদের ব্যাপারেও ইসলামী আইন একই মনোভাব পোষণ করে। ধর্মীয় আচার, আইন (ইউরোপীয় দৃষ্টিকোণ থেকে), নৈতিকতা এবং ভাল ব্যবহারের সাথে কোনরকম তুলনামূলক আলোচনা না করেও বিরক্তিকর ইসলামী আইনের প্রকৃতিকে আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। মূলত: এইসব আইনকানুন বিশ্বাসী এবং ইসলামী সমাজের প্রত্যেক সদস্যের জীবনকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

এই আইন জীবনের প্রত্যেক প্রান্ত এবং অংশে অনাহুতের মতো প্রবেশ করে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে ইসলামী আইন গ্রাস করে ফেলতে চায়। তীর্থযাত্রার কর থেকে শুরু করে কৃষিবিষয়ক চুক্তি, দাসদের নিয়ন্ত্রণ অথবা তাদের বাসস্থান, কোন বিয়েতে দাওয়াত, দাঁতখোচানোর কাঠিটির ব্যবহার পদ্ধতি, প্রাকৃতিক প্রয়োজনকে মেটানো, ধর্মীয় পোষাক, পুরুষের সোনা অথবা রূপা পড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা, পশুপাখির প্রতি আচরণ সবকিছুর উপর ইসলামী আইন প্রভাব বিস্তার করতে চায়।

ইসলামী আইন আসলে এক ধরণের চাপিয়ে দেয়া মতবাদ, আরোপিত নিয়মকানুন। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি একজন পার্থিব কর্তৃপক্ষের দ্বারা সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য এসব নিয়মকানুনকে আল্লাহ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। দুয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া এইসব নিয়মকানুন আল্লাহকে উদ্দেশ্য করেই রচিত। আল্লাহ'র দুর্বোধ্য ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের জন্য এইসব তৈরি করা হয়েছে। সব নিয়মগুলোই এমন যে মানুষ কল্পনায় যেন সব স্পষ্ট দেখতে পারে। যে কোন অজুহাতে মানুষের এইসব কার্যাবলীর দায়দায়িত্বকে আমরা নিন্দা করি। এইসব বিধিবিধান প্রচার করার পিছনে যেই থাকুক না কেন আমরা তাকেও নিন্দা করি।

ইসলামের আইনকানুনের গভীরে যাওয়ার আগে আমরা দেখব যে এসব কিভাবে এবং কিসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের মধ্যে কোন পার্থক্য করা চলবে না।
যিশুখ্রিস্ট একটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এটা পরবর্তীকালের খ্রিস্টানদের চিন্তার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। "সিজারের পাওনা সেইসব জিনিস দিয়ে পরিশোধ কর, যা সিজারের নিজস্ব। আর ঈশ্বরের পাওনা ঈশ্বরের নিজস্ব জিনিস দিয়ে পরিশোধ কর" (ম্যাথু,/ Matt 22.17)। ঈশ্বর এবং সিজার এই দুই কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা বিষয় এবং ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধরণের চার্চ ও রাষ্ট্রের বিভক্তি ইসলামে অনুপস্থিত। এমনকি প্রাচীন আরবী ভাষাতেও পেশাদার ও অপেশাদার ধর্মগুরু, লৌকিক ও ঐশ্বরিক, পার্থিব ও অপার্থিব ইত্যাদি শব্দের পার্থক্য বিষয়ে কোন শব্দ নেই। আসলে কেন রাষ্ট্র এবং ধর্মের মধ্যে কোন পার্থক্য রাখা হয় নি এটা বুঝতে হলে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে। মোহাম্মদ নিজে শুধুমাত্র নবী নন, তিনি একজন রাষ্ট্রনায়কও বটে। তিনি শুধুমাত্র একটি জনগোষ্ঠী নয়, একটি রাষ্ট্র এবং সমাজও তৈরি করেছেন। তিনি একজন সমরনায়ক, যুদ্ধ করেছেন এবং এর মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি একজন আইনপ্রণেতা, এবং তা প্রয়োগ করেছেন। ঠিক শুরু থেকেই মুসলিমরা এমন একটি জনগোষ্ঠী তৈরি করেছে যা একই সাথে রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় দুই চরিত্রকে বহন করেছে। আর এই রাষ্ট্রের প্রধান ছিল মোহাম্মদ। কয়েকটি যুদ্ধের অসাধারণ বিজয় প্রথমদিকের মুসলমানদের কাছে এটাই প্রমাণ করেছে যে আল্লাহ তাদের পক্ষে রয়েছে। একারণে ঠিক শুরু থেকে ধর্মীয় ইতিহাস ও ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাস, রাজনৈতিক শক্তি এবং বিশ্বাস এদেরকে পার্থক্য করার বিষয়ে কারও কোন প্রশ্ন ছিল না। ফলে সিজারের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগে খ্রিস্টানদের তিনশত বৎসরের ধর্মীয় অরাজকতা জাতীয় কোন কিছু ইসলামের ছিল না।
অসমাপ্ত
মুক্তমনায় প্রকাশিত

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post