বিজ্ঞান ধর্মকে অবশ্যই ধ্বংস করবে ২

পূর্ব প্রকাশের পর ....

বিশ্ব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে ধর্ম খুব দ্রুত তার উপযোগীতা হারাচ্ছে। যে কোন নামের ঈশ্বরে বিশ্বাস, কোন বইয়ের অভ্রান্তবাদ আরোপ, জীবিত ও মৃতদের বিচারের জন্য যিশু আবার ফিরে আসবে কিংবা মুসলিম শহীদরা সরাসরি বেহেশতে যাবে ইত্যাদি বিশ্বাস বিভিন্ন মতবাদগুলোর মধ্যে ক্রমাগত বেড়ে চলা যে যুদ্ধ তার ভুল দিকে পক্ষাবলম্বন করে। বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে পার্থক্য হল একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের অনুসন্ধিৎসা থেকে প্রাপ্ত খাঁটি তথ্যের সাথে আদর্শবাদী কিছু অপূর্ণাঙ্গ মতবাদের পার্থক্য। আমি বিশ্বাস করি যে আগামী বছরগুলোতে কার্যকারণ এবং বিশ্বাসের মধ্যে শত্রুতা আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে ও নিয়ন্ত্রণহীন হবে। ঈশ্বর, আত্মা, পাট, স্বাধীন ইচ্ছা ইত্যাদি আসলে লৌহযুগের ভাবনা। এসব এখন পর্যন্ত চলে এসে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণাকে বাধাগ্রস্থ করছে আর জনকল্যাণমূলক ধারণাগুলোকে বিকৃত করছে। আমেরিকাতে আমরা বরং এমন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারি যিনি ধর্মীয় বাণীগুলোকে আন্তরিকভাবে ভয়ংকর বলে বিবেচনা করবেন। ইসলামবাদীদের দ্বারা পারমানবিক বা জৈবিক অস্ত্রের ভয়াবহ আক্রমণের মুখোমুখি হওয়ার মত মনে করবেন। ইসলামবাদীদের এরকম আক্রমণের সম্ভাবনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আদিম কল্পনাগুলো বিষয়ে বিজ্ঞানীদের তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত। অথচ ধর্মের প্রতি সহনশীল মনোভঙ্গির অজুহাতে তারা নিশ্চুপ থাকেন।

বিভিন্ন ধারণাগুলোর মধ্যে চলমান যুদ্ধে জিততে হলে বিজ্ঞানী এবং অন্যান্য মানবতাবাদী মানুষদেরকে অতিন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ও নীতিবোধ বিষয়ে ভিন্নসুরে কথা বলার পথ আবিষ্কার করতে হবে। বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে যে পার্থক্য তা শুধুমাত্র আমাদের নৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাধাদান প্রসঙ্গে নয়, কিংবা জগত সম্পর্কে আমাদের আলোচনা থেকে প্রাপ্ত এক অসাধারণ সচেতনতা বিষয়েও নয়। ধর্ম ও বিজ্ঞানের যে মৌল উপসংহার তার প্রতি আমাদের কঠোর মনোভঙ্গির মধ্যে এই পার্থক্য রয়েছে। আমাদের আবেগগত প্রয়োজনীয়তার সাথে মিলতে পারে এমন একটি পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের এমন একটি পথ খুঁজতে হবে যা দুর্দশাগ্রস্থ অযৌক্তিকতার উপর নির্ভর করবে না। আইনের সহায়তায় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের শিখতে হবে। জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞানের উৎস বলে দাবী করে মানব জীবনের এমন প্রত্যেক উপাদানকে চিহ্নিত করতে হবে। বাস্তবের প্রকৃতি সম্পর্কে নিজেদের সাথে মিথ্যাচার না করেই এ কাজ আমাদেরকে করতে হবে।

আমি আশাবাদী যে মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান যত বেশি পরিপক্ক হবে আমাদের চিন্তাজগতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ততোবেশি হবে। মহাবিশ্বে নিজেদের অবস্থানের প্রেক্ষিতে যখন মানুষকে আমরা আর বেশি ভালোবাসাপ্রবণ, কম আতংকিত এবং সত্যিকারের পরম আনন্দ পাবার পথ খুঁজে দিতে পারব, তখন বিভেদসৃষ্টিকারী কোন ধর্মীয় কল্পকাহিনীর প্রয়োজন আর আমাদের হবে না। শুধুমাত্র তখনই কি আমাদের শিশুদেরকে খ্রিস্টান, ইহুদি, মুসলমান বা হিন্দু হিসেবে মনে করার অভ্যাসকে হাস্যকর এবং অশ্লীল বলে মনে করা হবে? শুধুমাত্র সেই সময়েই কি আমরা পৃথিবীর এই গভীর এবং ভয়ংকর জখমের চিকিৎসা করতে পারব?

সমাপ্ত

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post