বিশ্বাস করার স্বপক্ষে কিছু ভাল ও মন্দ কারণ ৫

আবার প্রথার কথায় আসি। এবার আমরা একে ভিন্নপদ্ধতিতে দেখবো। প্রথা বা ঐতিহ্য কেন আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। নিজেদের জন্য উপযোগী পরিবেশে যেন সুস্থভাবে বেচেবর্তে থাকতে পারি সেজন্য প্রাণীরা বিবর্তিত হয়েছে। আফ্রিকার সমভূমিতে সিংহরা খুব ভালবাবে বাঁচতে পারে। ক্রেমাস স্বাদু জলের মাছ, আবার কাঁকড়ারা লবনাক্ত জল ছাড়া থাকতে পারে না। মানুষও একরকম প্রাণী। আমরা এই পৃথিবীতে অন্য মানুষদের সাথে মিলেমিশে বাঁচার উপযোগী করে তৈরি হয়েছি। আমরা সিংহ বা কাঁকড়া মত সাধারণত কোন খাবার শিকার করি না। বাজার থেকে বিক্রেতার কাছ থেকে কিনে নেই। তারা আবার উৎপাদকের কাছ থেকে কিনে আনে। মাছ যেমন পাখনা দিয়ে জলের মধ্যে ভেসে বেড়ায় আমরা তেমন মানুষের সমুদ্রে সাঁতার কাটছি। অন্য মানুষের সাথে আমরা বিভিন্নরকম সম্পর্ক তৈরি করি। আর এই সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করে আমাদের বুদ্ধি। সমুদ্র যেমন লবনাক্ত জল দিয়ে ভর্তি, মানুষের পৃথিবীতেও তেমন জানার মত বিভিন্ন জটিল বিষয় আছে। যেমন ভাষা।

তুমি ইংরেজিতে কথা বল, কিন্তু তোমার বন্ধু অ্যান ক্যাথরিন কথা বলে জার্মান ভাষায়। তুমি তোমার নিজস্ব ’মানব সমুদ্রে’ সাঁতার কাটার উপযোগী ভাষায় কথা বল। আর কোন উপায় নয় শুধুমাত্র প্রথা বা ঐতিহ্যের মাধ্যমেই ভাষাকে আমরা পেয়েছি। ইংল্যান্ডে পিপ/পেপ (Pepe) বলতে কুকুরকে বোঝায়। কিন্তু জার্মানীতে বলে এইন হান্ড (ein Hund)। এর মধ্যে কোনটাই সঠিক নয় আবার কোনটাই অন্যটার চেয়ে বেশি সত্যি নয়। দুটো শব্দই উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। নিজের মত মানব সমুদ্রে সাঁতার কাটার সুবিধার জন্য শিশুদেরকে নিজেদের দেশেই ভাষা শিখতে হবে। নিজের মত মানুষদের সাথে আরও নানাকিছু করতে হলে তাকে অন্য আরও অনেক প্রথা ও ঐতিহ্যকে ব্লটিং পেপারের মত আত্মস্থ করতে হবে। মনে রাখবে প্রথাগত তথ্য বলতে যা দাদুর কাছ থেকে পিতা, পিতার কাছ থেকে নতুন প্রজন্ম পর্যন্ত চলে এসেছে তাকে বোঝায়। শিশুর মগজকে সব ধরণের প্রথাগত তথ্যগুলোকে পিপাসার্তের মত গলাধকরণ করতে হবে। কোনটা ভাল বা মন্দ তা বাছাই করার সামর্থ শিশুদের কাছ থেকে আশা করা যায় না। তাই তারা ভূত-পেত্নী, জ্বিন-পরী, ডাকিনী, দৈত্য ইত্যাদি বিশ্বাস করা সহ বিভিন্ন আজেবাজে শব্দ শিখে ফেলে।
এটা আসলেই দু:খজনক। কিন্তু করার কিছু নেই। কারণ শিশুরা তাদের চারপাশের সবরকমের তথ্যকে খুব দ্রুত শিখে ফেলে। বিশেষ করে বড়রা যা বলে তা সত্য-মিথ্যা, ঠিক-বেঠিক যাই হোক তাকে গভীরভাবে বিশ্বাস করে। বড়দের অনেক কথা বেশ তথ্যবহুল এবং বিভিন্ন প্রমাণসাপেক্ষে সত্যি একথা ঠিক। কিন্তু তারা যখন বিভিন্ন অর্থহীন বা বাজে কথা বলে তখন তা শেখা থেকে শিশুদের বিরত রাখার কোন উপায় নেই। এখন ওই শিশু যখন বড় হবে তখন সে কি করবে? সেও ছোটদেরকে একই কথা বলবে। তাই বলছিলাম, যখন কোন কিছু গভীরভাবে বিশ্বাস করা হয় তা সে যতই মিথ্যা হোক কিংবা বিশ্বাস করার মত কোন কারণ থাক বা না থাক, তা ছড়িয়ে পড়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাহিত হয়ে যায়।
(অসমাপ্ত)

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post