বুদ্ধিমানরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না

আজ ২৪ জুন ২০০৮ তারিখের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রফেসর রিচার্ড লীন (Professor Richard Lynn) এর একটি বক্তব্য প্রকাশ হয়েছে। এর শিরোনাম Intelligent people less likely to believe in God। প্রফেসর লীন মনে করেন ধর্মীয় বিশ্বাস বিংশ শতাব্দীতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। উলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের (Ulster University) মনোবিদ্যার এমিরেটস অধ্যাপক বলেন -সাধারণত যা মনে করা হয় অর্থাৎ গড় ধারণার চেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিদীপ্ত মেধাবী মানুষ নিজেকে নাস্তিক মনে করেন। এমনকি সাধারণ মানের বুদ্ধিমান মানুষদের মধ্যে ধর্মকে অস্বীকার প্রবণতা পূর্ববর্তী শতকগুলোর তুলনায় গত শতকে অনেক বেড়েছে।

প্রফেসর লীন বুদ্ধির সাথে লিঙ্গ ও জাতিগোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ে অসংখ্য বক্তব্য রেখেছেন। একাধিক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাজীবীরা অন্য যে কারও চাইতে ঈশ্বরে কম বিশ্বাস করেন।

এক জরীপে দেখা গেছে রয়াল সোসাইটির ফেলোদের মধ্যে মাত্র ৩.৩% ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। অথচ সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের শতকরা ৬৮.৫ ভাগ মানুষ নিজেকে বিশ্বাসী বলে মনে করে। ৯০ এর দশকে নেয়া আর একটি ভোটে দেখা গেছে আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমী অব সাইন্স এর সদস্যদের মধ্যে মাত্র ৭ জন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে।

প্রফেসর লীন মনে করেন বেশিরভাগ প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তাদের বুদ্ধি যখন বাড়তে থাকে তখন তাদের মনে সন্দেহ ঢুকে যায়। তিনি 'টাইম উচ্চশিক্ষা ম্যাগাজিন'কে বলেন- সাধারণ মানুষের চাইতে তুলনামূলকভাবে কম বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাজীবী ঈশ্বরে কেন বিশ্বাস করে? আমার দৃঢ় ধারণা এর কারণ হল আই কিউ। শিক্ষক বা পণ্ডিতদের আই. কিউ. সাধারণ মানুষের চাইতে বেশি থাকে। বিভিন্নরকম তাৎক্ষনিকভাবে নেয়া জরীপে দেখা গেছে একটু বেশি আই কিউ যাদের, তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দেহ করেন। তিনি আরও বলেন -গত শতকে মানুষের আরও বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার সাথে সাথে ১৩৭টি উন্নয়নশীল দেশেগুলোতে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

প্রফেসর লীন এর বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত পোষনকারী মানুষের সংখ্যা কম নয়। তারা নিজ অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লীন এর মন্তব্যের সমালোচনা করছেন। লন্ডনের বার্কবিক (Birkbeck College) কলেজের 'ধর্ম ও তুলনামূলক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক প্রফেসর গর্ডন লিনচ (Gordon Lynch) বলেন -এটা (লীন এর বক্তব্য) জটিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর প্রতি ততোটা মনোযোগী ছিল না। তিনি আরও বলেন ধর্মীয় বিশ্বাস ও বুদ্ধিবৃত্তিকে এইভাবে সম্পর্কিত করা একটি বিপদজনক প্রবণতাকে উসকে দিতে পারে। সাধারণ মানুষ ধর্মকে আদিম বলে মনে করতে পারে। অথচ বর্তমানে বৈচিত্র্যময়, বহুত্ববাদী সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জটিলতা নিয়ে এক কষ্টসাধ্য সমস্যার মধ্যে আছি। তার বক্তব্য (লীনের) আমাদেরকে হয়ত খুব একটা সাহায্য করবে না।

লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ের (Leeds University) খ্রিস্টিয় ধর্মতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. আলিস্টির ম্যাকফ্যাদেন(Dr Alistair McFadyen) বলেন আলোচ্য বক্তব্যটির উপসংহার হল "এটা (লীনের বক্তব্য) ধর্মবিরোধী মানসিকতাসম্পন্ন পশ্চিমা সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার এক সামান্য উদাহরণ"।

লন্ডন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের (London Metropolitan University) শিক্ষা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান লেকচারার ড. ডেভিড হার্ডম্যান (Dr David Hardman) বলেন আই কিউ এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সম্পর্কের মধ্যে সত্যিকারের গবেষণা চালানো খুব দুরূহ একটি ব্যাপার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর বিপরীত উদাহরণের সংখ্যা মোটেও কম নয়। দেখা গেছে উচ্চমাত্রার বুদ্ধিমানরা বেশি সামর্থ্য ও হয়তো বেশি ইচ্ছাশক্তির অধিকারী। তারাও প্রশ্ন করেছে এবং উল্টোপথে ঘুরে এসে বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতকে শক্তিশালী করেছে।

প্রিয় পাঠক আপনি কি মনে করেন? আপনার কি ধারণা? সন্ধ্যা ৭.৩০ মি. এ এই লেখাটি প্রস্তুত করার সময় টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এই খবরটির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ২৭৩ জন।
আপনার মত কী?

12/Post a Comment/Comments

  1. AnonymousJuly 02, 2008

    ভুয়া কথা।

    ReplyDelete
  2. AnonymousJuly 04, 2008

    আমার কাছেও ঠিক তাই মনে হয়। আমিও দেখেছি, শিক্ষিত মানুষরা অশিক্ষিতদের চাইতে ধর্মকর্ম একটু কম করে। কেউ কেউ আবার বিভিন্নরকম সন্দেহের কথাও বলে।

    ReplyDelete
  3. AnonymousJuly 04, 2008

    eta puropuri miththa kata

    ReplyDelete
  4. AnonymousJuly 04, 2008

    I don't believe this kind of false propaganda.

    ReplyDelete
  5. AnonymousJuly 04, 2008

    অনেক জ্ঞানীগুণী আছেন যারা ইসলাম ধর্মকে ভালবাসেন। তারা কি কম বুদ্ধিমান? এইসব কি আজেবাজে কথা লিখতাছেন?

    ReplyDelete
  6. AnonymousJuly 04, 2008

    আ,ি প্রফেমর লীন এর কথাকে সমর্থন করি। আমার কাছে মনে হয় যারা কম পড়াশfনা করে, বা যারা বিভিন্ন বিষয় ভাল বোঝে না তারাই আল্লাহকে বিশ্বাস করে। আসলে আল্লাহ বা যেকোন ঈশ্বর তথা পরকালকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। এই সব ভাবনা শিশুদেরকে ভয় দেখানোর জন্য বা কথা শোনানোর মত ব্যাপার। ছোটকালে মা আমাদেরকে ভয় দেখাত; বলত ভাত খাও বাবা, নাহলে শিয়াল বা পাগল ধরে নিয়ে যাবে। আল্লাহ খোদার ব্যাপারগুলোও অনেকটা সেই রকম। সব হাস্যকর ব্যাপার।

    ReplyDelete
  7. AnonymousJuly 04, 2008

    সব বাজে কথা। যাদের কুন কামকাজ নাই,তারাই এইগুলান নিয়া চিন্তা করে।

    ReplyDelete
  8. AnonymousJuly 04, 2008

    সকলকে ধন্যবাদ।
    আসলেই তাই। যারা একটু বেশি জানেন, তারা বিভিন্নরকম সংস্কারকে সমর্থন করেন। তারা বিভিন্ন রকম কুসংস্কারকে বিশ্বাস করেন না। আর যারা আর একটু বেশি জানেন, তারা যে পরকালকে বা ঈশ্বরের ধারণাকে বিশ্বাস করবেন না সেটাই স্বাভাবিক। সবাই নিশ্চয় লক্ষ্য করবেন যে তৃতীয় বিশ্ব তথা স্বল্প শিক্ষিত দেশগুলোতে ধর্মের প্রচার প্রসার ও গোঁড়ামীর পরিমাণ শিক্ষিত সচেতন দেশগুলোর চাইতে অনেক কম। শিক্ষিত ফ্যামিলিতেও দেখবেন একটা কমশিক্ষিত বা কুশিক্ষিত ফ্যামিলির চাইতে তারা অনেক বেশি লিবারাল বা উদার।

    ReplyDelete
  9. AnonymousJuly 05, 2008

    {{সংশোধনী}}
    উপরের উত্তরে আমি লিখেছি "যারা একটু বেশি জানেন, তারা বিভিন্নরকম সংস্কারকে সমর্থন করেন।" এটা পড়তে হবে- "যারা একটু বেশি জানেন, তারা বিভিন্নরকম সংস্কারকে সমর্থন করেন না।"
    ধন্যবাদ সকলকে

    ReplyDelete
  10. AnonymousJuly 05, 2008

    I support agni. thanks

    ReplyDelete
  11. AnonymousJuly 05, 2008

    আমার কাছে প্রফেসর লীন এর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে। আমার বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে সন্দেহবাদীদের সংখ্যাই বেশি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, গোঁড়াপন্থীদেরকে উদারপন্থীরা সমর্থন করে না। এখানে উদারপন্থীরা তুলনামূলকভাবে বেশি শিক্ষিত। মাদ্রাসায় পড়লে বুদ্ধির ততটা বিকাশ ঘটেনা, যতটা ঘটে স্কুল কলেজে পড়লে। অতএব আমার মনে হয় এই দৃষ্টিকোণ থেকে লীন এর কথা সঠিক।
    সত্যি কথাটা প্রকাশ করে দেয়ার জন্য অগ্নিভাইয়াকে ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  12. AnonymousJuly 11, 2008

    মিছা কথা।

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post