২০০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশন (RDFRS http://richarddawkinsfoundation.org/) এর উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুই ঘন্টাব্যাপী এই খোলামেলা আলোচনা সভায় বক্তারা ধর্ম বিষয়ক বিভিন্ন অভিজ্ঞতা পরস্পরের সাথে বিনিময় করেন। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন:-
- ক্রিস্টোফার হিচেনস
- ড্যানিয়েল ডেনেট
- রিচার্ড ডকিন্স
- স্যাম হ্যারিস
ধর্মের বিরুদ্ধে বই লেখার কারণে এই চার লেখক সম্প্রতি মিডিয়ার ব্যাপক মনোযোগ পাচ্ছেন। কিছু ইতিবাচক কিছু নেতিবাচক। নিম্নের আলোচনায় সাম্প্রতিক বই সম্পর্কে জনগণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাঁরা মতবিনিময় করেছেন। সমকালীন বিশ্বে ধর্ম যেসব অনুষঙ্গের মুখোমুখি হচ্ছে সেই জটিল সমস্যা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। উত্তরণের উপায় বলে দিয়েছেন।
ছবি তুলেছেন জোস টিমোনেন।
টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করুন:
এমপি ৩ (MP3) ডাউনলোড করুন:
রিচার্ড ডকিন্স: কয়েকটা সাধারণ অভিযোগ আমাদের সবার বিরুদ্ধে আছে। আমরা উদ্ধত, কর্কশ, বিদ্বেষী, গলাবাজি করি ইত্যাদি। এইসব বিবিধ বিষয় নিয়ে আমরা কী ভাবছি?
ড্যানিয়েল ডেনেট: হা! হা! আচ্ছা! আমি বরং এতে আমোদ পাই। কারণ আমি ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদেরকে উদ্দেশ্য করে বই লিখেছি। যখন লিখছিলাম তখন খসড়া লেখাটি পবলভাবে ধর্মভাবাপন্ন কয়েক ছাত্রকে পড়তে দিয়েছিলাম। বাস্তবে একেবারে আশাতীত ঘটনা ঘটল। আমার লেখাকে মানসিক যন্ত্রণা তৈরী করার জন্য দায়ী করা হয়েছিল। ফলে আমাকে কিছু সমন্বয় করতে হয়েছে। কিন্তু তা পরিশেষে তেমন ভাল হয় নি। কারণ আমাকে কর্কশ এবং আক্রমণাত্মক প্রবণতার জন্য বারবার নিন্দা করা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম এ খেলায় জেতা যাবে না। এটা পুরস্কারহীন খেলা। ধর্মগুলো দারুণ ফন্দিবাজ। কোন রকম সমালোচনা সহ্য করা ধর্মগুলোর পক্ষে অসম্ভব। আর, এজন্য রূঢ় না হয়ে উপায় থাকে না।
রিচার্ড ডকিন্স: রূঢ় না হয়ে উপায় থাকে না? বলছেন কি?
ড্যানিয়েল ডেনেট: তারা কিন্তু আবেগের খেলা খেলে এবং এক বিশেষ রকম পছন্দের পক্ষে থাকে। অতএব আমাকে …. আমার কি রাগ করা উচিত নাকি চিৎকার করে সমালোচকদের উত্তর দিব। সমালোচনার উত্তরে চেচামেচি করবো? মানে আমি বলতে চাচ্ছি আমার কি চিৎকার করবো নাকি ঠোটদুটোকে বোতাম লাগিয়ে বন্ধ করে দেব।
স্যাম হ্যারিস: ঠিক বলেছেন। আপনাদের বক্তব্য লোকাচারকে ধ্বংস করে দেয়। আমার মনে হয় আমরা সকলে একই সমস্যার শিকার। ধর্ম যৌক্তিক সমালোচনাকে মেনে নেয় না। তা আপনি যতই আনুষ্ঠানিকভাবে বলুন না কেন, ধর্ম তা স্বীকার করে না। প্রিয় সেকুলারিস্ট এবং অবিশ্বাসীগণ এটা আপনারা হয়তো আগে থেকেই জানেন। তাই আমার মনে হয়, মানুষকে তাদের কুসংস্কার নিয়ে থাকতে দেয়া উচিত। এই সব হীন ধারণা যতই ক্ষতি করুক না কেন তাদের দিকে তাকানোর কোন দরকার নেই।
ড্যানিয়েল ডেনেট: হ্যাঁ, ঠিক এটাই বলতে চেয়েছিলাম। আমার বইয়ের নামকরণে এর ছাপ আছে। আমাদেরকে এই অর্গল ভাঙতে হবে। কিন্তু যদি জনগণের উন্মত্ততাকে অধিকার দেয়া হয় তাহলে আমার ধারণা আমরা দুজনই আরও বেশি আক্রমণ ও বিদ্রুপের শিকার হব। তারমানে তারিক রমজানকে যে পছন্দ করে তার সাথে শুধু মতের অমিল হওয়া নয়। বিষয়টা আরও কঠিন। তারিক রমজানকে চিনলেন না- আরে, তিনি এখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নামজাদা বক্তা। অবশ্য বেশিরভাগ সময় তিনি তার নিজের প্রত্যাশার কথাই বেশিবেশি বলেন। কিন্তু যখন নারীকে পাথর ছোঁড়ার প্রসঙ্গ আসে তখন আইনের কথা বলেন। পাথর ছোড়া বিষয়ে স্থানীয় আইনের বাইরে তিনি যেতে চান না বা বেশি কিছু বলতেও চান না। আমার কাছে তাকে বিরক্তির চাইতে বেশি ভাল লাগেনি।
স্যাম হ্যারিস: ঠিক, হ্যাঁ, কিন্তু আমি ভাবছি….
ক্রিস্টোফার হিচেনস: বিদ্রুপ? শুধু বিদ্রুপ নয়, আসলে তারা হুমকি দিচ্ছিল।
স্যাম হ্যারিস: কিন্তু আপনি রেগে যাননি। এসব ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে কখনও জড়াতে দেখিনি। যেমন রমজানের কেসে আপনাকে শান্ত ও ধীর থাকতে দেখা গেছে। বিবিধ চিন্তাভাবনা থেকে প্রাপ্ত নীতিবোধ আপনাকে সতর্ক করেছে।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ। কিন্তু সে হয়তো বলবে, তার মত মানুষেরা বলবে যে মোহাম্মদের ঐতিহাসিকতায় সন্দেহ পোষণ করে তাদের মনের গভীরে, মর্মঃস্থলে আমি আঘাত করেছি।
স্যাম হ্যারিস: ঠিক।
ক্রিস্টোফার হিচেনস: আচ্ছা, আমি, ঘটনা হল, প্রত্যেক মানুষই আক্রমণের শিকার হতে পারে। অন্তত: তাদের বিবেকের সততা দিয়ে এটা সবাই বুঝতে পারে। কুসংস্কারহীন ধর্ম কিংবা স্বর্গীয় স্বৈরাচার কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক আমরা তা জানিনা। আমরা বাঁচি আসলে….
স্যাম হ্যারিস: তুমি কি সত্যিই এমন আক্রান্ত হয়েছিলে? এর কারণ কি? শুধু কি পরস্পরকে ভুল বোঝাবুঝি নাকি অন্য কিছু?
ক্রিস্টোফার হিচেনস: না, আমি শুধু বলতে চাই এই ধরণের আপত্তিকর আক্রমণ যদি প্রকাশ্যে মেনে নেয়া হয় বিশেষ করে মিডিয়া যদি তা প্রচার করে তাহলে তা খারাপ হবে। আমার ধারণা আমাদেরকে আক্রমণের অভিযোগ আরও বেশি করে করতে হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আমরা পাবো না, ওরা দেবেও না, অথবা নিজেদেরকে নির্যাতিত সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচয় দিতে হবে। এটা বরং উল্টো বিপদ ডেকে আনবে। আমি এ বিষয়ে একেবারে নিঃশংসয়। আমি ড্যানিয়েলের সাথেও একমত। আসলেই আমাদের বিরুদ্ধে যে ধরণের আক্রমণ পরিচালনা করা হয় তাকে উপেক্ষা করার কোন উপায় নেই। কারণ আমরা যা বলি তা অনেক সময় প্রবলবিশ্বাসীর অন্তরের অন্তঃস্থলে আঘাত হানে। যেমন. আমরা যিশুর পবিত্রতা প্রত্যাখ্যান করি। এটা হয়তো তাদেরকে তীব্রভাবে ব্যথা দেয়। এটা আসলেই খুব খারাপ।
(চলবে)
Post a Comment