চার অশ্বারোহী ৬

পূর্ব প্রকাশের পর....

ক্রিস্টোফার হিচেনস: আচ্ছা, সেটা কতটুকু ভদ্রতা হবে?

স্যাম হ্যারিস: এই পয়েন্টে আমাদেরকে আবার ফিরে আসতে হবে। ‘বিজ্ঞানের উদ্ধত মনোভাব’ বিষয়টি মোটেও ফেলনা নয়। কারণ বিজ্ঞান ছাড়া আর কোন তত্ত্ব ধর্মকে এত নির্মমভাবে অপমানিতকরে না। আমার জানা মতে মানুষের ইতিহাসে বিজ্ঞানীরাই প্রথম যাঁরা বলেছেন-“আমি জানি না”। তার মানে যদি তুমি কোন বিজ্ঞানীকে তাঁর নিজের বিষয়ে কিছু বলতে বল, তাহলে তিনি মাথা নাড়াতে থাকবেন। তিনি বলবেন - আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু আমি জানি এই কক্ষে আমার চাইতে এই বিষয়ে আরও বেশি জানেন এমন কেউ আছেন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই তুমি জান যে এখনও সব তথ্য আমরা পাইনি। এটাই আলাপের আদর্শ ধরণ। এই পদ্ধতিতে আমরা আমাদের অবহেলার বিষয়টাকে কিছুটা সুযোগ দেয়ার জন্য আংশিক হলেও খোলামেলা হতে পারি।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: আচ্ছা। আসলে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি এই ধরণের ভণ্ডামী করে থাকেন। তবে তুমি যা বলছো আমি তা বুঝতে পেরেছি।

স্যাম হ্যারিস: আচ্ছা। হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঠিক বুঝেছো।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: মেনি নামের একজন ইতিহাসবিদ বলেছেন ‘ না আমি আত্মসমর্পিত।’

রিচার্ড ডকিন্স: না, কিন্তু যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তিত্বের এরকম করা উচিত। যে কোন...

ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ। তাদের এমন করা উচিত।

রিচার্ড ডকিন্স: ধর্মপ্রাণ মানুষ সম্পর্কে একথা সাধারণভাবে সত্য যে তারা যা বিশ্বাস করে সেই সব ধর্মগ্রন্থাদি তারা প্রতি সপ্তাহে পাঠ করে। ওদের তিনজন ঈশ্বর আছে। কুমারী মেরি, যিশুতো মারা গেছে... আর একজন হলো... কি যেন নাম? ... তিন দিনের জন্য অন্তারালে ছিল, পরে আবার এসেছে।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ।

রিচার্ড ডকিন্স: আমার বক্তব্যের সারমর্ম হল- মন:কষ্ট দেবার জন্য আমাদেরকে তারা এখনও অভিযুক্ত করে চলেছে। তারা বলছে আমরা নাকি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী, যা ভাল জানিনা তাকে নিয়েও সন্দেহ পোষণ করি।

ড্যানিয়েল ডেনেট: আমি জানি বিজ্ঞানীরা নিজেদেরকে সবসময় প্রশ্ন করে- ”আমি হয়তো ভুল করতে পারি।” এই প্রশ্নটাকে বিশ্বাসীরা কখনও চিন্তা করেছেন বলে আমার মনে হয় না।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: আসলে... তোমার কথাকে সমর্থন না করলে কি কিছু মনে করবে?

ড্যানিয়েল ডেনেট: না।

ক্রিস্টোফার হিচেনস: অনেকরকম কথাবার্তা বিশ্বাসী মানুষকে কঠোর করে তুলেছে। না, তাদেরকে পেটানোর বিষয়ে নয়, আলোচনা প্রসঙ্গে বলছি। তারা বলবে যে বিশ্বাসহীন দুনিয়াতে তারা বাস করছে। একটি প্রার্থনা বাক্য আছে- "হে ঈশ্বর, আমাকে অবিশ্বাসের হাত থেকে রক্ষা কর।” গ্রাহাম গ্রীন একটি বিশেষ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন-”ক্যাথলিক হওয়াটা অবিশ্বাসের প্রতি ছুড়ে দেয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।” অসংখ্য মানুষ দুইরকম বইয়ের উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করে। আসল ঘটনা হল, আমি দেখেছি, অসংখ্য মানুষ নিজেকে সবসময় বিশ্বাসী হিসেবে পরিচয় দেয়। শুনতে খারাপ লাগবে সেজন্য বলছি না যে এটা স্কিজোফ্রেনিয়া, তবে তাদের কথার আপাতগ্রাহ্যতা সম্পর্কে তারা সচেতন। তবে সন্দেহ করার আইডিয়াকে তারা সম্মান করেন। যখন সম্ভব তখন তারা এই বিষয়ে ভাবেন।

রিচার্ড ডকিন্স: যখন তারা নিজের দেষকে হাল্কা করার মানসে ধর্মসূত্র পাঠ করে তখন বেশ মজা লাগে। নিজের দেষ স্বীকার করার মাধ্যমে তারা বোধহয় মনের সন্দেহকে দূর করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি, আমি বিশ্বাস করি- এই ধরণের মন্ত্র পাঠ করার কারণ কি? মনের সন্দেহ দূর করার জন্য কোন জোর খাটানো নাকি অন্তরের অবিশ্বাসকে ঢেকে রাখার একটি প্রায়- কোনটা? ’আমি বিশ্বাস করি’ এই কথাটি বারবার বলার কারণ আসলে ‘আমি বিশ্বাস করি না।’

ক্রিস্টোফার হিচেনস: হ্যাঁ, তা তো বটেই। ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধীরাও একই ধরণের। তারা অন্যদেরকে বিশ্বাসী দেখতে চায়। অন্যরা যাতে অবিশ্বাসী না হয়ে যায় তার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এমন সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়।

রিচার্ড ডকিন্স: হ্যাঁ।

অসমাপ্ত

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post