বিশ্বাস করার স্বপক্ষে কিছু ভাল ও মন্দ কারণ ১

সমকালের সাহসী বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স এই চিঠিটি মেয়ে জুলিয়েট এর ১০ম জন্মদিন উপলক্ষ্যে লিখেছিলেন। পরবর্তীতে A Devil’s Chaplain বইয়ের শেষে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই বাংলা অনুবাদটি মুক্তমনা ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্বাস করার স্বপক্ষে কিছু ভাল ও মন্দ কারণ
- রিচার্ড ডকিন্স

প্রিয় জুলিয়েট,
এখন তোমার বয়স দশ হয়েছে। একটা জরুরী বিষয় জানানোর জন্য এই চিঠি লিখছি। আমরা যা জানি তা কিভাবে জানি- এই সমস্যা কি কখনো তোমাকে অবাক করেনি? আমরা কোন কিছু জানি কিভাবে? যেমন এই তারাগুলোর কথা ধরা যাক। এরা ছোট্ট বিন্দুর মত আকাশে জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু আসলে এগুলো সূর্যের মত এক একটা বিরাট আগুনের গোলা। এর কোন কোনটা অনেক অনেক দূরে অবস্থিত। আর এরকম এক নক্ষত্র সূর্যকে ঘিরে আমাদের পৃথিবী বলের মত বনবন করে ঘুরছে - এটাইবা আমরা কিভাবে জানি।

প্রশ্নগুলোর উত্তর হচ্ছে ’প্রমাণ’। কোন কিছুকে প্রমাণিত বা সত্য বলার স্বপক্ষে কিছু সহজ উদাহরণ আছে। যেমন দেখা, শোনা, গন্ধ বা স্বাদ ইত্যাদি ইন্দ্রিয়গত অনুভূতিকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। নভোচারীরা পৃথিবী থেকে শত শত মাইল দূরের মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন। সেখান থেকে একাধিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে পৃথিবী গোল। খালি চোখেই তা দেখা যায়। নভোচারীরা নিজের চোখে আমাদের সুন্দর এই নীল পৃথিবীকে গোল দেখেছেন। আমাদের চোখ সবসময় যে সব কিছু দেখতে পারে তা নয়। নিখুঁতভাবে দেখতে গেলে চোখের আরও কিছু জিনিসের সাহায্য প্রয়োজন। ঝকঝকে, মিটমিটে, উজ্জ্বল আলোর সন্ধ্যাতারা আকাশে খালি চোখে দেখা যায়। কিন্তু যদি তুমি টেলিস্কোপ দিয়ে দেখো, তাহলে দেখবে সন্ধ্যাতারা আসলে একটি সুন্দর গোলক। একে ভেনাস (শুক্রগ্রহ) বলে। এরকম করে সরাসরি দেখে, শুনে বা অনুভব করে তথ্যগ্রহণ করাকে বলে পর্যবেক্ষণ।

সাধারণত প্রমাণ নিজে পর্যবেক্ষণ নাও হতে পারে। কিন্তু পর্যবেক্ষণ প্রমাণের পিছনে অবশ্যই থাকবে। কেউ ’খুন’ হলে সাধারণত তার চাক্ষুষ সাক্ষী থাকেনা। খুনের ঘটনা খুনি নিজে ও আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ দেখেনা। কিন্তু গোয়েন্দারা বিভিন্ন দিক ও উপাদান পর্যবেক্ষণ করে এমন সব প্রমাণ সংগ্রহ করেন যেগুলো শুধু একটি দিকেই আঙ্গুল তোলে। যে ছুরিটা ব্যবহার করা হয়েছিল তার গায়ে অপরাধীর আঙুলের ছাপ থেকে যায়। এ থেকে প্রমাণ হয় যে খুনি ছুরিটা নিজহাতে ধরেছিল। শুধুমাত্র এই চিহ্ন দেখে বলা যাবেনা যে যার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে সেই খুনি। বরং আরও অন্য অনেক প্রমাণ পাওয়া গেলে তাহলে তার সাথে একে মেলানো যেতে পারে। একজন গোয়েন্দা বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন। অনেক রকম প্রমাণ সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। এই প্রমাণগুলোকে বিভিন্নভাবে তুলনা করে, বিশ্লেষণ করে একটা সমাধান বের করেন।

যারা মহাকাশবিজ্ঞানী তাদের কাজকর্ম অনেকটা গোয়েন্দাদের মত। তারা এই পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মান্ড নিয়ে নানারকম পর্যবেক্ষণ শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ঠিক কোনটা সত্যি এ বিষয়ে তারা প্রথমে একটি সন্দেহ বা ধারণা চিন্তা করেন ( একে Hypothesis বলে)। এরপর বিষয়টি নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে, অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করেন। যদি তারা সত্যকে বুঝতে পারেন তাহলে একটি সম্ভাব্য মন্তব্য করেন। একে বলে ভবিষ্যৎবাণী করা। মনে করো, যদি পৃথিবীটা সত্যি সত্যি গোল হয় তাহলে কি ঘটা উচিত? একজন ব্যক্তি যদি একদিকে মুখ করে ক্রমাগত যেতে থাকে তাহলে একসময় সারা পৃথিবী ঘুরে তার আগের জায়গায় চলে আসা উচিত। যদি তোমার হাম হয় তাহলে ডাক্তার কি করেন? তিনি প্রথম দেখাতেই বলে দেন না যে তোমার হাম হয়েছে। তিনি প্রথমে তোমাকে দেখে মনে মনে ধারণা করেন যে তোমার হয়তো হাম হয়েছে। এরপর তিনি চোখ দিয়ে তোমাকে বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি দেখবেন তোমার মুখে বা হাতে কোন দাগ আছে কি না? তারপর তোমার কপাল গরম কি না তা হাত দিয়ে স্পর্শ করে বুঝবেন। তোমার বুকের ভিতর কফ জমে কোন শব্দ হচ্ছে কি না তা কান দিয়ে শুনবেন (স্টেথেস্কোপের সাহায্যে)। এই ধরণের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রমাণ পাওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন যে তোমার হাম হয়েছে। ডাক্তাররা কখনও কখনও রোগীকে আরও নানারকমের পরীক্ষানিরীক্ষা করতে বলেন। রোগীর রক্ত পরীক্ষা বা এক্সরে করার পর তিনি নিশ্চিত হন। এই পরীক্ষাগুলো ডাক্তারের চোখ, কান এবং হাতকে রোগীর সমস্যা বুঝতে সাহায্য করে।

(অসমাপ্ত)

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post