ইসলামে কাম ও কামকলা- ২৭

ধাতৃ-মাতৃত্বের ক্ষেত্রে পালনীয় বিধিনিষেধ সংক্রান্ত একটি হাদিসঃ

জন্মসুত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ-মায়ের ক্ষেত্রে তা হারাম। ---৩০.৩.১৫
মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.৩.১৫:
ইয়াহিয়ার কাছ থেকে আমি, মালিকের কাছ থেকে ইয়াহিয়া, আব্দুল্লাহ ইবনে দিনারের কাছ থেকে মালিক, সুলাইমান ইবনে ইয়াছারের কাছ থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার, উরউয়া ইবনে জুবাইরের কাছ থেকে সুলাইমান এবং উম্মুল মোমেনীন আয়েশার কাছ থেকে উরুয়া বলেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন- “জন্মসুত্রে যে সব বিষয় হারাম, দুধ-মায়ের ক্ষেত্রেও তা হারাম”।

এই নিয়মানুযায়ী শিশুটি তার ধাত্রী মায়ের জন্যে হারাম। অর্থাৎ, শিশুটি বড় হলেও বিনাবাধায় তার ধাত্রীমায়ের কাছে যেতে পারবে, যেন ধাত্রী মা এবং জন্মদাত্রী মা সমতুল্য। এই নিয়ম আপাতদৃষ্টিতে মহৎ বলে মনে হচ্ছে, এর মধ্যে আবার কোন সমস্যা লুকিয়ে আছে কি? আরেকটু নিবিড়ভাবে ষ্টাডি করে দেখা যাক।

ইসলাম ধর্মানুযায়ী একটি মেয়ের যে কোন বয়েসে বিয়ে হতে পারে, এমনকি সদ্যজাত শিশুকেও বাপমা বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। নয় বছর বা এর চেয়ে বেশী বয়েসের যে কেউ ধাত্রী মা হতে পারে। এখন একটি কেস স্টাডি যাক। ছয় মাস বয়েসী একটি ছেলে শিশু, তার দুধ মা নয় বছর বয়েসী এক কিশোরী। মেয়েটি শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াল। শিশুটি আঠারোয় পা দিল। ইসলামী আইন অনুযায়ী আঠার বছর বয়েসে একটি পুরুষ শিশু বালকত্ব অর্জন করে। তখন দুধ মা’র বয়স সাতাশ বা এর সামান্য উপরে, বলতে গেলে সে তখন যৌবনের মধ্যগগনে। প্রেম, বিয়ে, সন্তান ধারণ ইত্যাদির প্রকৃষ্টতম সময় তার। ইসলামের আইন অনুযায়ী এই দুধ মায়ের সাথে সদ্য যৌবনে পা দেয়া যুবকটির বিয়ে সম্পুর্ণরূপে হারাম, এমনকি এই মায়ের গর্ভজাত যে কোন মেয়ের সাথে (দুধ বোন) তার বিয়েও সম্পুর্ণরূপে হারাম।

'রিলায়েন্স অব দ্য ট্রাভেলার' নামক প্রামাণ্য শারিয়া গ্রন্থ থেকে এসম্পর্কিত কয়েকটি আইন পেশ করা হলো (রেফারেন্স-৮, পৃ-৫৭৫-৫৭৬। এন ১২.০- দুগ্ধ পানের কারণে অবিবাহযোগ্য আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠা (রিযা)। এন১২.১-কোন মেয়ে যদি কোন পুরুষ শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ায়, সে বাচ্চাটির মা হয়ে যায়, (তবে সব ক্ষেত্রে নয়) শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যথা- স্ত্রীলোকটির সাথে তার বিবাহ-সম্পর্ক স্থাপন হারাম হয়ে যায়, সে স্ত্রীলোকটির পানে তাকাতে পারবে বা তার সাথে নিরিবিলিতে সাক্ষাত করতে পারবে, এবং তাকে স্পর্শ করলে তার অজু ভঙ্গ হবে না; যদি:-

(এ) - উক্ত দুধ নয় বছর বা তদুর্ধ বয়েসী বালিকার স্তন্য হতে নিঃসৃত হয়ে থাকে, তা সে নিঃস্বরণ যৌনক্রিয়ার ফলেই হোক কিংবা অন্যকোন কারণেই হোক;

(বি) - এবং দুগ্ধপানরত শিশুটির বয়স দুই বছর বা এর চেয়ে কম হয়;

(সি) - এরূপ দুধ খাওয়ানোর সংখ্যা পৃথক পৃথকভাবে কমপক্ষে পাঁচবার হয় (স্তন্যদান বা ব্রেষ্ট-ফিডিংয়ের সংখ্যা পাঁচ বারের কম হলে উক্ত বিধিনিষেধ কার্যকরী নয়, পৃথক পৃথকভাবে স্তন্যদান করার অর্থ-- সর্বসাধারণের কাছে যা পৃথক হিসেবে স্বীকৃত) এন ১২.২-এরূপ অবস্থায়:

(১) - এরূপ স্তন্যদায়িনী নার্সের পক্ষে উক্ত শিশু কিংবা তার অধঃস্তন সম্পর্কযুক্ত পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) কারও সাথে বিবাহ বন্ধন স্থাপন করা ‘এক্সক্লুসিভলি’ নিষিদ্ধ (এখানে এক্সক্লুসিভলি বলতে বুঝায় শুধুমাত্র শিশুটি কিংবা তার অধঃস্তন কেউ, উর্ধতন কেউ নয়, অর্থাৎ শিশুটির পিতা, ভ্রাতা ইত্যাদি কেউ নয়)

(২) - সে (স্ত্রীলোকটি) শিশুটির মা হয়ে যায়, এবং শিশুটির জন্যে বিবাহ করা হারাম হয়ে যায় তাকে এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত (পারিবারিক কিংবা দুগ্ধপানসঞ্জাত সম্পর্ক) উর্ধতনদেরকে, এবং তার সাথে সম্পর্কযুক্ত অধস্তনদেরকে (কারণ অধস্তনরা যেন তার নিজের ভাইবোন হয়ে গেছে)।

অসমাপ্ত

0/Post a Comment/Comments

Previous Post Next Post