বিশ্বসভ্যতার যত অগ্রগতি হচ্ছে, ততই একটা বিষয় ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে উঠছে। সেটা হল মানবতাবাদ। মানবতাবাদ বা মনুষ্যত্বের সংজ্ঞা নিয়ে এখনও বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এক একটা জাতিগোষ্ঠী নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ এবং মনুষ্যত্বকে সংজ্ঞায়িত করতে চায়।
মানুষ কে, মনুষ্যত্ব কি, মানবতা কি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গভেদে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি সংজ্ঞা তৈরির চেষ্টা অগ্রসর মানুষদের মধ্যে মধ্যযুগের আগে থেকেই ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক শক্তির অপপ্রভাবে তা নির্ধারণ করা সম্ভবপর হচ্ছিল না। অতঃপর ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ তৈরি হবার পর একটি সর্বজনীন মানবতার সংজ্ঞা তৈরি করা হয়। এর প্রধান চেতনা হল কোন কিছুর বিনিময়ে মনুষ্যত্বকে ছোট করা যাবে না। মানবতাকে সবসময় প্রধানতম বিবেচ্যবিষয় বলে গ্রহণ করতে হবে। বিপরীতে ইসলামিক মানবতার সংজ্ঞা পড়ুন। নিজেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
অতীতে যেসব সামাজিক শক্তির প্রভাবে মানুষ মনুষ্যত্বের বিশ্বজনীন জয়গান গাইতে পারে নাই, তার মধ্যে ধর্ম প্রধানতম ছিল। ধর্মের কারণেই দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে মানুষ খণ্ডিত ছিল। মানুষের মন, বুদ্ধির যথাযথ বিকাশ ঘটতে পারে নাই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ধর্মের কারণে পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি মানুষ মারা গেছে। ধর্ম এই গণহত্যাগুলোতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। নিজ বক্তব্য সমুন্নত রাখার জন্য ধর্মগুলো মানুষ হত্যাকে সমর্থন করেছে, উৎসাহ জুগিয়েছে।
বলা হয়ে থাকে ১৭৭০ সালের সমসাময়িক সময়ে জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের পরপর শুরু হয় আধুনিক বিজ্ঞানের যাত্রা। এর পরবর্তী ২০০ বৎসরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। মানুষ এমন সব সুবিধা বা জ্ঞান লাভ করেছে যা পূর্ববর্তী সহস্র বৎসরে ধর্মগুলো করে দেখাতে পারেনি। একটা সহজ উদাহরণ দেয়া যায়। ইসলাম ধর্মের প্রধান গ্রন্থ কোরানকে সকল জ্ঞানের আধার এবং প্রবর্তক মোহাম্মদকে সর্বকালের সেরা জ্ঞানী বলা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এই কোরানের কোথাও আরবভূমির মাটির নিচের তেলের খনির কথা লেখা নেই, কিংবা মোহাম্মদ তার পায়ের নিচ থেকে এক ফোঁটা তেল উত্তোলন করতে পারেন নি। তাকে রাতের অন্ধকারে উটের চর্বি জ্বালিয়ে চারপাশ আলোকিত করতে হয়েছে।
আজকে আমরা ধর্ম নয়, বিজ্ঞানের আশীর্বাদের কল্যাণে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ইত্যাদি পেয়েছি। রেফ্রিজারেটর, এসি. ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির কল্যাণে স্বস্তির জীবন যাপন করতে পারছি। বেচারা জ্ঞানী মোহাম্মদকে কিন্তু আরবের প্রচণ্ড গরমে শরীর পুড়িয়ে দিনযাপন করতে হয়েছে। এসির স্বপ্ন কোনদিন তিনি দেখেন নি। রাত্রে মরুভূমির তীব্র শীতে হিটার জ্বালাতে পারেননি। তিনি চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করতে পারেন (!?) কিন্তু একটা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালাতে পারলেন না। তিনি দুলদুল ঘোড়ার পিঠে চড়ে সপ্ত আসমান ঘুরে আসতে পারেন, কিন্তু হেলিকপ্টার দূরে থাক, একটা বেলুনেও চড়ার কথা সাহাবীদের বলতে পারেন নি। ঘোড়ার পিঠে চড়েই তাকে বিভিন্ন যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়েছে। এমনকি জ্বীনপরীদের পিঠে চড়ে যদি অনুসারীদের চোখের সামনে দু'একপাক ঘুরে আসতেন, তাও মানা যেত। জীপ দূরে থাক, মটরসাইকেল এমনকি একটা সাইকেলও তিনি উদ্বাবন করতে পারেন নি। নিজের বা বন্ধু-সাথীদের বিভিন্ন রোগে অসুখে তাকে টোটকা কবিরাজী চিকিৎসা নিতে হয়েছে। একটা সামান্য ট্যাবলেট খেতে পারেন নি। এভাবে ধর্ম ও ধর্মনেতাদের ব্যর্থতা, সীমাবদ্ধতার অসংখ্য উদাহরণ দেয়া যায়। সমকালীন পৃথিবীতে ধর্মগুলো মানুষের উপকার করতে সত্যিকার অর্থেই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, অথচ বাগাড়ম্বরে কোন ঘাটতি পড়তে দেখা যায় না।
আসলে যতদিন মানুষ অল্পশিক্ষিত থাকবে, যতদিন শাসকেরা মানুষের শিক্ষার সুযোগ সীমিত করে রাখবে, ততদিন ধর্ম তার অপশাসন চালিয়ে যাবে। ধর্মের উৎসাহে শাসকরা যা খুশি তাই করে যেতে পারবে। অনেকে বলে যে ধর্ম নয়, ধর্মকে যারা ব্যবহার করছে তারাই আসল দায়ী। কিন্তু তারা ভাবেনা যে ধর্ম নিজেকে ব্যবহার কেন করতে দেবে। ধর্ম কি এমন জিনিস যে তাকে অস্ত্রের মত করে ব্যবহার করা যায়। মানুষ মারার কাজে লাগসই অস্ত্র হিসেবে ধারণ করা যায়।
আমার আপত্তি ঠিক এই জায়গাটাতেই। অলৌকিকতা, আত্মা, পরকাল ইত্যাদি কোন সমস্যা নয়। এগুলো হাস্যকর, শিশুতোষ কৌতুক মাত্র। শৈশবে বুদ্ধির বিকাশের ও কল্পনার প্রসারের জন্য রূপকথার জগতের দরকার আছে। মানুষের সমাজবিকাশের শৈশবকালে এমন রূপকথার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়াও তখন জ্ঞান সীমিত ছিল। একটা ডাইনোসরের হাড় পাওয়া গেলেও মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব ছিল না যে সেটা ডাইনোসর। তারা স্বাভাবিক বুদ্ধিতে বলবে যে, এটা কোন দৈত্য বা রাক্ষস-খোক্কসের হাড়। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিকাশের সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন অজানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। আরও যেগুলো পাইনি সেগুলো আগামী ২/১ শত বৎসরের মধ্যে পাওয়া যাবে। এই কথা বিশ্বাস করতে হবে না। বিজ্ঞান যে গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে তার সামর্থ্য ইতিমধ্যে কল্পনার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। আগামীতে আরও দূরে যাবে। আমাদের জীবনকে বিজ্ঞান আরও সহজ, সাবলীল, স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলবে।
ইতিহাসের কোন বাঁকে ধর্মগুলো কিন্তু মানুষের জীবনকে কখনও সামান্যতম রাঙিয়ে তুলতে পারেনি। পারেনি মানুষের জীবনকে সুখ ও শান্তিতে পরিপূর্ণ করতে। বরং মানুষকে ধর্মগুলো সবসময় ধমক দিয়েছে, চোখ রাঙিয়েছে। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর ধূয়া তুলে মানুষকে মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
ইতিহাসের পাঠক মাত্রই ব্রিটিশ শাসনের শেষকালের দেশভাগের চরম বিপর্যয় সাম্প্রদায়িক গণহত্যার কথা জানেন। পাকিস্তানের পাঞ্জাব থেকে যে ট্রেন এসেছে, সে ট্রেনগুলো ছিল লাশ দিয়ে ভর্তি। মানুষকে কচুকাটা করে হত্যা করা হয়েছে। কলকাতার ভয়াবহ দাঙ্গার কথা হয়ত অনেকে জানেন। গত শতকের শেষ দশকের ভারতের গুজরাট ও বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা হয়ত অনেকের মগজ থেকে এখনও মুছে যায় নি। মধ্যযুগের কয়েকশত বৎসরব্যাপী চলা 'ক্রুসেড' এর কথাও অনেকে জানেন। এইসব মানবিক বিপর্যয় কার তৈরি? পাঞ্জাবের বুটা সিং এর অমর প্রেমকাহিনী কি মননশীল মানুষরা ভুলে যাবে। কখনও নয়। এই সাম্প্রদায়িক বিভাজন কার তৈরি? শাসকের নাকি ধর্মের? ধর্ম কি মানুষকে জাতিবিদ্বেষ শেখায় না? ধর্ম কি কাফের, মুশরিক, বিধর্মী ইত্যাদি অশ্লীল, নোংরা, কুৎসিত, জঘন্য শব্দ তৈরি করে নি?
এইসব বাস্তবতাই অগ্নিসেতু ব্লগের প্রয়োজনীয়তার পূর্বকথা। ধর্ম কি? তার স্বরূপ কি? বাস্তব কি? কল্পনা কি? আমরা কি মানুষ নাকি ধর্মীয় রোবট? মনষ্যত্ব কাকে বলে? মানুষ কে? মানবতার মানদণ্ড কিরূপ? ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে পরিষ্কার হবে। মানুষ বুঝতে পারবে মনুষ্যত্বের আসল সংজ্ঞা। ভালবাসবে পরস্পরকে। মানুষ জয়গান গাইবে মানবতার। ঘৃণাকে উপড়ে ফেলবে মগজ মনন থেকে।
আমরা যে অন্ধকারাচ্ছন্ন ধর্মপ্রভাবিত সমাজে বাস করছি, সেই থকথকে সমাজের ওপারে রয়েছে সবুজ, উষ্ণ, শান্ত, স্বস্তির এক আলোকিত সমাজ। সেই সমাজে যেতে হলে প্রয়োজন একটি সেতুর। অন্ধকারকে দূর করার জন্য প্রয়োজন আগুনের। পুড়ে অঙ্গার নয় পরিশোধন করার জন্যও প্রয়োজন আগুনের। ওপারের স্বপ্নীল সমাজে যেতে হলে অগ্নিসেতু'র বিকল্প নেই। সেই স্বপ্নসমাজে ভ্রমণ করার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ভয় নেই, আগুনের আলোয় আলোকিত সেতু আমাদেরকে আগুনের স্পর্শে নিকষিত করবে। অগ্নিস্পর্শে আমাদের মগজ থেকে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে যাবতীয় অজ্ঞতা, কুসংস্কার, হিংসা ও বিদ্বেষের নোংরা প্রভাব।
আলোকিত সমাজের স্বপ্ন আপনাকে আলোকিত করুক। মনের গলিঘুপচি থেকে দূর হয়ে যাক যাবতীয় ধর্মীয় মলিনতা। আপনি মুক্ত হন যাবতীয় ধর্মীয় দাসত্ব থেকে। ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কাউকে ঘৃণা নয়, সম্মান করতে শিখুন। ভাল থাকুন। সত্যিকার শান্তিতে থাকুন।
-- অগ্নি অধিরূঢ়
Agni, I like you man. I wanted to start this blog in Bangladesh, but It seems that you bit me to that and I like your posting very much. You and I are very alike and I have read about almost all the religions, including Moman's from the Native U.S religion. I would say religion is good for the Mullahs(Religious Pandit's), and it's a way of life for stupid followers. I hope that someday we all will realize our true potentials to be real human and bridge the distances between color, race, sex, and etc, and eccept all of us Human as Human.
ReplyDeleteপৃথিবীর কোন ধর্ম মানুষকে ঘৃণা করতে বলে ?
ReplyDeleteআপনি কী ধর্মেম ভেতর ভাল কিছুই দেখতে পান না ?
হ, ভালোই কইছেন য়োস্তাদ...
ReplyDeleteএকমত আছি...
Prophet Muhammad (saw) and Education [Importance of Education in Islam]
ReplyDeleteOne of the distinctive features of Islam is its great emphasis on learning and seeking knowledge. Noble Qur'an and the Islamic Tradition (Sunnah) invite Muslims to seek and acquire knowledge and wisdom and to hold men of knowledge in high esteem. Prophet Muhammad (saw) ordered Muslims to be active in their search for learning, crossing oceans and continents if necessary. "Seek knowledge even in China" he said. The first few verses of Noble Qur'an that were revealed to our Prophet Muhammad (saw) mention the importance of reading, pen, and teaching for human beings. Hence, it is a beautiful prayer for every Muslim to ask always: "O my Lord! Increase me in knowledge." (Noble Qur'an, 20:114)
The only limit set to the acquisition of knowledge in Islam is that Muslims should seek useful knowledge. Our great Prophet Muhammad (saw) is reported as having said: "My Lord, save me from the useless knowledge." Any knowledge helping man in performing his God assigned role in this world is useful, other than that is considered useless knowledge. Example of useless knowledge: Abul Hikam (Father of Wisdom) was the title of Amr ibn Hesam, one of the bitterest enemies of Prophet Muhammad (saw). Prophet Muhammad (saw) nicknamed him Abu Jahl (Father of Ignorance) because of his uncompromising attitude towards Islam.
From the above example we can see, how much our Prophet Muhammad (saw) disliked ignorant and at the same time we can learn from the following example, how much our Prophet Muhammad (saw) liked to learn.
The mosque of Medinah (Masjid-E-Nabawi) was not only a place of worship. The believers assembled here to learn. When Prophet Muhammad (saw) was present they heard his words of wisdom, his elucidation on the verses of Noble Qur'an and benefited from his counsel. And when he was not present, other faithful companions taught what they had heard from Prophet Muhammad (saw).
Once our Prophet Muhammad (saw) entered the Masjid before the prayer time. He found two groups in the Masjid. One group was busy with its own act of worship; some were reading Noble Qur'an while the others were supplicating. The other group was in a corner busy learning. They learnt how to read and write and discussed the teachings of Islam and their application to their daily lives. Looking at both, Prophet Muhammad (saw) said: "They are both engaged in useful pursuits. But I am a teacher. I shall join the group assembled to learn." So he (saw) sat with the group of students.
Prophet Muhammad (saw) said: The virtue of knowledge is more beloved with Allah (SWT) than the virtue of worship.
ইসলাম
ReplyDeleteদুনিয়ায় যত রকম ধর্ম রয়েছে তার প্রত্যেকটির নামকরণ হয়েছে কোন বিশেষ ব্যক্তির নামে। অথবা যে জাতির মধ্যে তার জন্ম হয়েছে তার নামে। যেমন, ঈসায়ী ধর্মের নাম রাখা হয়েছে তার প্রচারক হযরত ঈসা (আ)- এর নামে। বৌদ্ধ ধর্ম মতের নাম রাখা হয়েছে তার প্রতিষ্ঠাতা মহাত্মা বুদ্ধের নামে। জরদশতি ধর্মের নামও হয়েছে তেমনি তার প্রতিষ্ঠাতা জরদশতের নামে। আবার ইয়াহুদী ধর্ম জম্ম নিয়েছিল ইয়াহুদা নামে বিশেষ গোষ্ঠীর মধ্য। দুনিয়ায় আরো যেসব ধর্ম রয়েছে, তাদেরর নামকরণ হয়েছে এমনিভাবে। অবশ্য নামের দিক দিয়ে ইসলামের রয়েছে একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। কোন বিশেষ ব্যক্তি অথবা জাতির সাথে তার নামের সংযোগ নেই। বরং ‘ইসলাম’ শব্দটির অর্থের মধ্যের আমরা একটি বিশেষ গুণের পরিচয় পাই, সেই গুণই প্রকাশ পাচ্ছে এ নামে। নাম থেকেই বুঝা যায় যে, ইসলাম কোন এক ব্যক্তির আবিষ্কার নয়, কোন এক জাতির মধ্যে এ ধর্ম সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম কোন বিশেষ ব্যক্তি, দেশ অথবা জাতির সম্পত্তি নয়। তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইসলামের গুণরাজি সৃষ্টি করা। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক কওমের যেসব খাঁটি ও সৎলোকের মধ্যে এসব গুণ পাওয়া গেছে, তারা ছিলেন ‘মুসলিম’। এ ধরনের লোক আজো রয়েছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।
ইসলাম শব্দটির অর্থ
আরবী ভাষায় ‘ইসলাম’ বলতে বুঝায় আনুগত্য ও বাধ্যতা। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও তার বাধ্যতা স্বীকার করে নেয়া এ ধর্মের লক্ষ্য বলেই এর নাম হয়েছে ‘ইসলাম’।
ইসলামের তাৎপর্য - part 1
ReplyDeleteসকলেই দেখতে পাচ্ছে যে, চন্দ্র, সূর্য, তারা এবং বিশ্বের যাবতীয় সৃষ্টি চলছে এক অপরিবর্তনীয় বিধান মেনে। সেই বিধানের বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হবার উপায় নেই। দুনিয়া এক নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরে চলছে এক নির্দিষ্ট পথ অতিক্রম করে। তার চলার জন্য যে সময়, যে গতি ও পথ নির্ধারিত রয়েছে, তার কোন পরিবর্তন নেই কখনো। পানি আর হাওয়া, তাপ আর আলো-সব বিছুই কাজ করে যাচ্ছে এক সঠিক নিয়মের অধীন হয়ে। জড়, গাছপালা, পশু-পাখীর রাজ্যেরও রয়েছে তাদের নিজস্ব নিয়ম। সেই নিয়ম মুতাবিক তারা পয়দা হয়, বেড়ে ওঠে, ক্ষয় হয়, বাঁচে ও মরে। মানুষের অবস্থা চিন্তা করলে দেখতে পাই যে, সেও এক বিশেষ প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন। এক নির্দিষ্ট জীবতাত্ত্বিক বিধান অনুযায়ী সে জম্মে, শ্বাস গ্রহণ করে, পানি, খাদ্য, তাপ ও আলো আত্মস্থ করে বেঁচে থাকে। তার হৃৎপিন্ডের গতি, তার দেহের রক্তপ্রবাহ, তার শ্বাস-প্রশ্বাস একই বাঁধাধরা নিয়মের অধীন হয়ে চলছে। তার মস্তিষ্ক, পাকস্থলী, শিরা-উপশিরা, পেশীসমূহ, হাত, পা, জিভ, কান, নাক-- এক কথায় তার দেহের প্রতিটি অংগ- প্রত্যংগ কাজ করে যাচ্ছে সেই একই পদ্ধতিতে যা তাদের প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
যে শক্তশালী বিধানের অধীনে চলতে হচ্ছে দুনিয়া জাহানের বৃহত্তম নক্ষত্র থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম কণিকা পর্যন্ত সবকিছু, তা হচ্ছে এক মহাশক্তিমান বিধানকর্তার সৃষ্টি। সমগ্র সৃষ্টি এবং সৃষ্টির প্রতিটি পদার্থ এ বিধানকর্তার আনুগত্য স্বীকার করে এবং সবাই মেনে চলে তাঁরই দেয়া নিয়ম। আগেই আমি বলেছি যে, দুনিয়া-জাহানের প্রভু আল্লাহ তা’য়ালার আনুগত্য ও তারই নিকট আত্মসমর্পণের নামই ইসলাম, তাই এদিক দিয়ে সমগ্র সৃষ্টির ধর্মই হচ্ছে ইসলাম। চন্দ্র, সূর্য, তারা গাছপালা, পাথর ও জীব-জানোয়ার সবাই মুসলিম! যে মানুষ আল্লাহকে চেনে না, যে তাঁকে অস্বীকার করে, যে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে পূজা করে এবং যে আল্লাহর কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে অংশীদার করে, স্বভাব-প্রকৃতির দিক দিয়ে সেও মুসলিম, কারণ তার জীবন-মৃত্যু সব কিছুই আল্লাহর বিধানের অনুসারী। তার প্রতিটি অংগ-প্রত্যংগ, তার দেহের প্রতিটি অণু ইসলাম মেনে চলে কারণ তার সৃষ্টি, বৃদ্ধি ও গতি সবকিছুই আল্লাহর দেয়া নিয়মের অধীন। মূর্খতাবশত যে জিহবা দিয়ে সে শির্ক ও কুফরের কথা বলছে, প্রকৃতির দিক দিয়ে তাও মুসলিম। যে মাথাকে জোরপূর্বক আল্লাহ ছাড়া অপরের সামনে অবনত করছে, সেও জম্মগতভাবে মুসলিম, অজ্ঞতার বশে যে হৃদয় মধ্যে সে অপরের প্রতি সম্মান ও ভালবাসা পোষণ করে, তাও সহজাত প্রকৃতিতে মুসলিম। তারা সবাই আল্লাহর নিয়মের অনুগত এবং তাদের সব কাজ চলছে এ নিয়মের অনুসরণ করে।
ইসলামের তাৎপর্য - part 2
ReplyDeleteএবার আর এক আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটি বিবেচনা করে দেখা যাক।
প্রকৃতির লীলাখেলার মধ্যে মানুষের অস্তিত্বের রয়েছে দু’টি দিক। এক দিকে সে অন্যান্য সৃষ্টির মতোই জীব-জগতের নির্দিষ্ট নিয়মে বাঁধা রয়েছে। তাকে মেনে চলতে হয় সেই নিয়ম। অপরদিকে, তার রয়েছে জ্ঞানের অধিকার, চিন্তা করে বুঝে কোন বিশেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছাবার ছাবার ক্ষমতা তার করায়ত্ত। নিজের ইখতিয়ার অনুযায়ী কোন বিশেষ মতকে সে মেনে চলে, আবার কোন বিশেষ মতকে সে অমান্য করে কোন পদ্ধতি সে পছন্দ করে, কোন বিশেষ পদ্ধতিকে আবার পছন্দ করে না। জীবনের কার্যকলাপের ক্ষেত্রে কখনো কোন নিয়ম-নীতিকে সে স্বেচ্ছায় তৈরী করে নেয়, কখনো বা অপরের তৈরী নিয়ম-নীতিকে নিজের করে নেয়। এদিক দিয়ে সে দুনিয়ার অন্যবিধ সৃষ্ট পদার্থের মতো একই ধরাবাঁধা নিয়মের অধীন নয়, বরং তাকে দেয়া হয়েছে নিজস্ব চিন্তা, মতামত ও কর্মের স্বাধীনতা।
মানবজীবনে এ দু’টি দিকেরই রয়েছে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব। প্রথম বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে মানুষ দুনিয়ার অপর সব পদার্থের মতই জম্মগত মুসলিম এবং আমি আগে যা বলেছি সেই অনুসারে মুসলিম হতে সে বাধ্য। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে মুসলিম হওয়া বা না হওয়ার উভয়বিধ ক্ষমতা তার মধ্য রয়েছে এবং এ নির্বাচন ক্ষমতার প্রভাবেই মানুষ বিভক্ত হয়েছে দু’টি শ্রেণীতে।
এক শ্রেনীর মানুষ হচ্ছে তারা, যারা তাদের স্রষ্টাকে চিনেছে, তাকেই তাদের একমাত্র মনিব ও মালিক বলে মেনে নিয়েছে এবং যে ব্যাপারে তাদেরকে নির্বাচনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সেখানেও তারই নির্ধারিত কানুন মেনে চলবার পথই তারা বেছে নিয়েছে, তারা হয়েছে পরিপূর্ণ মুসলিম। তাদের ইসলাম হয়েছে পূর্ণাঙ্গ। কারণ তাদের জীবনই পরিপূর্ণরূপে আল্লাহতে সমর্পিত। না জেনে-শুনে যার নিয়মের আনুগত্য তারা করছে জেনে-শুনেও তারই আনুগত্যের পথই তারা অবলম্বন করেছে। অনিচ্ছায় তারা আল্লাহর বাধ্যতার পথে চলেছিল, স্বেচ্ছায়ও তারই বাধ্যতার পথ তারা বেছে নিয়েছে। তারা হয়েছে এখন সত্যিকার জ্ঞানের অধিকারী। কারণ যে আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন জানবার ও শিখবার ক্ষমতা, সেই আল্লাহকেই তারা জেনেছে। এখন তারা হয়েছে সঠিক যুক্তি ও বিচার ক্ষমতার অধিকারী। কারণ, যে আল্লাহ তাদেরকে চিন্তা করবার, বুঝবার ও সঠিক সিদ্ধান্ত কায়েম করবার যোগ্যতা দিয়েছে, চিন্তা করে ও বুঝে তারা সেই আল্লাহরই আনুগত্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাদের জিহবা হয়েছে সত্যভাষী, কেননা সেই প্রভুত্বের স্বীকৃতি ঘোষণা করেছে তারা, যিনি তাদেরকে দিয়েছেন কথা বলার শক্তি। এখন তদের পরিপূর্ণ জীবনই হয়েছে পূর্ণ সত্যাশ্রয়ী। কারণ ইচ্ছা-অনিচ্ছায় উভয় অবস্থায়ই তারা হয়েছে একমাত্র আল্লাহর বিধানের অনুসারী। সমগ্র সৃষ্টির সাথেই তাদের মিতালী। কারণ সৃষ্টির সকল পদার্থ যার দাসত্ব করে যাচ্ছে, তারাও করেছে তারই দাসত্ব। দুনিয়ার বুকে তারা হচ্ছে আল্লাহর খলীফা (প্রতিনিধি) সারা দুনিয়া এখন তাদেরই এবং তারা হচ্ছে আল্লাহর।
কুফরের তাৎপর্য
ReplyDeleteযে মানুষের কথা উপরে বলা হলো, তার মুকাবিলায় রয়েছে আর এক শ্রেনীর মানুষ। সে মুসলিম হয়েই পয়দা হয়েছে এবং না জেনে, না বুঝে জীবনভর মুসলিম হয়েই থেকেছে। কিন্তু নিজের জ্ঞান ও বুদ্ধির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সে আল্লাহকে চেনেনি এবং নিজের নির্বাচন ক্ষমতার সীমানার মধ্যে সে আল্লাহর আনুগত্য করতে অস্বীকার করেছে। এ ধরনের লোক হচ্ছে কাফের। ‘কুফর’ শব্দটির আসল অর্থ হচ্ছে কোন কিছু ঢেকে রাখা বা গোপন করা। এ ধরনের লোকে ‘কাফের’ (গোপনকারী) বলা হয়, কারণ সে তার আপন স্বভাবের উপর ফেলেছে অজ্ঞতার পর্দা। সে পয়দা হয়েছে ইসলামী স্বভাব নিয়ে। তার সারা দেহ ও দেহের প্রতিটি অংগ কাজ করে যাচ্ছে ইসলামী স্বভাবেরই উপর তার পারিপার্শ্বিক সারা দুনিয়ার এবং তার নিজের সহজাত প্রকৃতি সরে গেছে তার দৃষ্টি থেকে। সে এ প্রকৃতির বিপরীত চিন্তা করেছে। তার বিপরীতমুখী হয়ে চলবার চেষ্টা করেছে।
এখন বুঝা গেল, যে মানুষ কাফের, সে কত বড় বিভ্রান্তিতে ডুবে আছে।
কুফরের অনিষ্টকারিতা -- part 1
ReplyDelete'কুফর’ হচ্ছে এক ধরনের মূর্খতা, বরং কুফরই হচ্ছে আসল মূর্খতা। মানুষ আল্লাহকে না চিনে অজ্ঞ হয়ে থাকলে তার চায়ে বড় মূর্খতা আর কি হতে পারে? এক ব্যক্তি দিন-রাত দেখেছে, সৃষ্টির এত বড় বিরাট কারখানা চলেছে, অথচ সে জানে না, কে এ কারখানার স্রষ্টা ও চালক। কে সে কারিগর, যিনি কয়লা, লোহা, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ও আরো কয়েকটি পদার্থ মিলিয়ে অস্তিত্বে এনেছেন মানুষের মত অসংখ্য অতুলনীয় সৃষ্টিকে? মানুষ দুনিয়ার চারিদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখতে পাচ্ছে এমন সব বস্তু ও কার্যকলাপ, যার ভিতরে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিতবিদ্যা, রসায়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অপূর্ব পূর্ণতার নিদর্শন; কিন্তু সে জানে না, অসাধারণ সীমাহীন জ্ঞান- বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ কোন্ সে সত্তা চালিয়ে যাচ্ছেন সৃস্টির এসব কার্যকলাপ। ভাবা দরকার যে মানুষ জ্ঞানের প্রাথমিক স্তরের খবরও জানে না, কি করে তার দৃষ্টির সামনে উম্মুক্ত হবে সত্যিকার জ্ঞানের তোরণদ্বার? যতই চিন্তা-ভাবনা করুক, যতই অনুসন্ধান করুক, সে কোন দিকেই পাবে না সরল- সঠিক নির্ভরযোগ্য পথ, কেননা তার প্রচেষ্টার প্রারম্ভ ও সমাপ্তি সব স্তরেই দেখা যাবে অজ্ঞতার অন্ধকার।
কুফর একটি যুলুম, বরং সবচেয়ে বড় যুলুমই হচ্ছে এ কুফর। যুলুম কাকে বলে? যুলুম হচ্ছে কোন জিনিস থেকে তার সহজাত প্রকৃতির খেলাপ কাজ যবরদস্তি করে আদায় করে নেয়া? আগেই জানা গেছে যে, দুনিয়ায় যত জিনিস রয়েছে, সবাই আল্লাহর ফরমানের অনুসারী এবং তাদের সহজাত প্রকৃতি (ফিতরাত) হচ্ছে ‘ইসলাম’ অর্থাৎ আল্লাহর বিধানের আনুগত্য। মানুষের দেহ ও তার প্রত্যেকটি অংশ এ প্রকৃতির উপর জম্ম নিয়েছে। অবশ্যি আল্লাহ এসব জিনিসকে পরিচালনা করবার কিছুটা স্বাধীনতা মানুষকে দিয়েছেন, কিন্তু প্রত্যেকটি জিনিসের সহজাত প্রকৃতির দাবী হচ্ছে এই যে, আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে যেন কাজে লাগানো হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি ‘কুফর’ করছে সে তাকে লাগাচ্ছে তার প্রকৃতি বিরোধী কাজে। সে নিজের দিলের মধ্যে অপরের শ্রেষ্ঠত্ব, প্রেম ও ভীতি পোষণ করছে অথচ তার দিলের প্রকৃতি দাবী করছে যে, সে তার মধ্যে একমাত্র আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রেম ও ভীতি পোষণ করবে। সে তার অংগ-প্রত্যংগ আর দুনিয়ায় তার আধিপত্যের অধীন সব জিনিসকে কাজে লাগাচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা বিরোধী উদ্দেশ্য সাধনের জন্য, অথচ তাদের প্রকৃতির দাবী হচ্ছে তাদের কাছ থেকে আল্লাহর বিধান মুতাবিক কাজ আদায় করা। এমনি করে যে লোক জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রত্যেকটি জিনিসের উপর এমন কি, নিজের অস্তিত্বের উপর ক্রমাগত যুলুম করে যাচ্ছে, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে?
কুফরের অনিষ্টকারিতা -- part 2
ReplyDelete‘কুফর’ কেবল যুলুমই নয়, বিদ্রোহ, অকৃতজ্ঞতা ও নেমকহারামিও বটে। ভেবে দেখা যাক, মানুষের আপন বলতে কি জিনিস আছে। নিজের মস্তিষ্ক সে নিজেই পয়দা করে নিয়েছে না আল্লাহ পয়দা করেছেন? নিজের দিল, চোখ, জিভ, হাত-পা, আর সব অংগ-প্রত্যংগ- সবকিছুর স্রষ্টা মানুষ না আল্লাহ? তার চারপাশে যত জিনিস রয়েছে, তার স্রষ্টা মানুষ না আল্লাহ এসব জিনিস মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী করে তৈরী করা এবং মানুষকে তা কাজে লাগাবার শক্তি দান করা কি মানুষের নিজের না আল্লাহর কাজ? সকলেই বলবে, আল্লাহরই এসব জিনিস, তিনিই এগুলো পয়দা করেছেন, তিনিই সব কিছুর মালিক এবং আল্লাহর দান হিসেবেই মানুষ আধিপত্য লাভ করেছে এসব জিনিসের উপর। আসল ব্যাপার যখন এই তখন যে লোক আল্লাহর দেয়া মস্তিষ্ক থেকে আল্লাহরই ইচ্ছার বিপরীত চিন্তা করার সুবিধা আদায় করে নেয়, তার চেয়ে বড় বিদ্রোহী আর কে? আল্লাহ তাকে চোখ, জিভ, হাত-পা, এবং আরো কত জিনিস দান করেছেন, তা সবকিছুই সে ব্যবহার করেছে আল্লাহর পছন্দ ও ইচ্ছা বিরোধী কাজে। যদি কোন ভৃত্ব তার মনিবের নেমক খেয়ে তার বিশ্বাসের প্রতিকূল কাজ করে যায়, তবে তাকে সকলেই বলবে নেমকহারাম। কোন সরকারী অফিসার যদি সরকারের দেয়া ক্ষমতা সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে থাকে, তাকে বলা হবে বিদ্রোহী। যদি কোন ব্যক্তি তার উপকারী বন্ধুর সাথে প্রতারণা করে সকলেই বিনা দ্বিধায় তাকে বলবে অকৃতজ্ঞ। কিন্তু মানুষের সাথে মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা ও অকৃতজ্ঞতার বাস্তবতা কতখানি? মানুষ মানুষকে আহার দিচ্ছে কোত্থেকে? সে তো আল্লাহরই দেয়া আহার। সরকার তার কর্মচারীদেরকে যে ক্ষমতা অর্পণ করে, সে ক্ষমতা এলো কোত্থেকে? আল্লাহই তো তাকে রাজ্য পরিচালনার শক্তি দিয়েছেন। কোন উপকারী ব্যক্তি অপরের উপকার করছে কোত্থেকে? সবকিছুই তো আল্লাহর দান। মানুষের উপর সবচেয়ে বড় হক বাপ-মার অন্তরে সন্তান বাৎসল্য উৎসারিত করেছেন কে? মায়ের বুকে স্তন দান করেছেন কে? বাপের অন্তরে কে এমন মনোভাব সঞ্চার করেছেন, যার ফলে তিনি নিজের কঠিন মেহনতের ধন সানন্দে একটা নিষ্ক্রিয় মাংসপিন্ডের জন্য লুটিয়ে দিচ্ছেন এবং তার লালন-পালন ও শিক্ষার জন্য নিজের সময়, অর্থ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কুরবান করে দিচ্ছেন? যে আল্লাহ মানুষের আসল কল্যাণকারী, প্রকৃত বাদশাহ, সবার বড় পরওয়ারদিগার, মানুষ যদি তার প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে, তাকে আল্লাহ বলে না মানে, তার দাসত্ব অস্বীকার করে, আর তার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে গুরুতর বিদ্রোহ, অকৃতজ্ঞতা ও নেমকহারামী আর কি হতে পারে।
কখনো মনে করা যেতে পারে না যে, কুফরি করে মানুষ আল্লাহর কোন অনিষ্ট করতে পারছে। যে বাদশাহর সাম্রাজ্য এত বিপুল-বিরাট যে, বৃহত্তম দূরবীন লাগয়েও আমরা আজো স্থির করতে পারিনি কোথায় তার শুরু আর কোথায় শেষ। যে বাদশাহ এমন প্রবল প্রতাপশালী যে, তার ইশারায় আমাদের এ পৃথিবী, সূর্য, মঙ্গলগ্রহ এবং আরো কোটি কোটি গ্রহ-উপগ্রহ বলের মতো চক্রাকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যে বাদশাহ এমন অফুরন্ত সম্পদশালী যে, সারা সৃষ্টির আধিপত্যে কেহ তার অংশীদার নেই, যে বাদশাহ এমন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল যে, সবকিছুই তার মুখাপেক্ষী অথচ তিনি কারুর মুখাপেক্ষী নন, মানুষের এমন কি অস্তিত্ব আছে যে তাকে মেনে বা না মেনে সেই বাদশাহর কোন অনিষ্ট করবে? কুফর ও বিদ্রোহের পথ ধরে মানুষ তার কোন ক্ষতি করতে পারে না, বরং নিজেই নিজের ধ্বংসের পথ খোলাসা করে।
কুফরের অনিষ্টকারিতা -- part 3
ReplyDeleteকুফর ও নাফরমানীর অবশ্যম্ভাবী ফল হচ্ছে এই যে, এর ফলে মানুষ চিরকালের জন্য ব্যর্থ ও হতাশ হয়ে যায়। এ ধরনের লোক জ্ঞানের সহজ পথ কখনো পাবে না, কারণ যে জ্ঞান আপন স্রষ্টাকে জানে না, তার পক্ষে আর কোন জিনিসের সত্যিকার পরিচয় লাভ অসম্ভব। তার বুদ্ধি সর্বদা চালিত হয় বাঁকা পথ ধরে, কারণ সে তার স্রষ্টার পরিচয় লাভ করতে গিয়ে ভুল করে, আর কোন জিনিসকেও সে বুঝতে পারে না নির্ভুলভাবে। নিজের জীবনের প্রত্যেকটি কার্যকলাপে তার ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা অবধারিত। তার নীতিবোধ, তার কৃষ্টি, তার সমাজ ব্যবস্থা, তার জীবিকা অর্জন পদ্ধতি, তার শাসন-পরিচালনা ব্যবস্থা ও রাজনীতি, এক কথায় তার জীবনের সর্ববিধ কার্যকলাপ বিকৃতির পথে চালিত হতে বাধ্য। দুনিয়ার বুকে সে বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে, খুন-খারাবি করবে, অপরের অধিকার হরণ করবে, অত্যাচার উৎপীড়ন করবে। বদখেয়াল, অন্যায়- অনাচার ও দুষ্কৃতি দিয়ে তার নিজের জীবনকেই করে তুলবে তিক্ত-বিস্বাদ। তারপর এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে সে যখন আখেরাতের দুনিয়ায় পৌঁছবে, তখন জীবনভর যেসব জিনিসের উপর সে যুলুম করে এসেছে, তারা তার বিরুদ্ধে নালিশ করবে। তার মস্তিষ্ক, তার দিল, তার চোখ, তার কান, তার হাত-পা এক কথায় তার সব অংগ-প্রত্যংগ আল্লাহর আদালতে অভিযোগ করে বলবেঃ এ আল্লাহদ্রোহী যালেম তার বিদ্রোহের পথে জবরদস্তি করে আমাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিয়েছে। যে দুনিয়ার বুকে সে নাফরমানীর সাথে চলেছে ও হারাম পথে রোযগার করে হারামের পথে ব্যয় করেছে, অবাধ্যতার ভিতর দিয়ে যেসব জিনিস সে জবরদখল করেছে, যেসব জিনিস সে তার বিদ্রোহের পথে কাজে লাগিয়েছে, তার সবকিছুই ফরিয়াদী হয়ে হাযির হবে তার সামনে এবং প্রকৃত ন্যায় বিচারক আল্লাহ সেদিন মযলুমদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিকারে বিদ্রোহীকে দিবেন অপমানকর শাস্তি।
agni dirghojibi ho baba........
ReplyDeleteদারুণ। আপনাকে স্যালুট জানাই। নিয়মিত লিখুন। আপনার ভাবনাপদ্ধতি ঠিক পথেই এগোচ্ছে। আমাদেরকে পাশেই পাবেন।
ReplyDeletePost a Comment